ঢাকা শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

পশু-পাখির চিকিৎসা এখন হাতের মুঠোয়

বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ০১:৩৮ এএম

**** বাকৃবি অধ্যাপকের তৈরি মোবাইল অ্যাপে 

বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক একটি উর্বর দেশ, যেখানে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন শুধু জীবিকার উৎস নয়, লাখো মানুষের অর্থনীতি ও জীবনের অবলম্বন। তবে প্রাণিসম্পদ খাত নানা চ্যালেঞ্জের মুখে, যেমন রোগ শনাক্তের সীমাবদ্ধতা, সঠিক চিকিৎসা ও টিকা প্রয়োগে জটিলতা, এবং প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব। এসব কারণে খামারিরা বারবার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান উদ্ভাবন করেছেন ‘ডিজিটাল খামারি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ। এটি সম্পূর্ণ বাংলায় তৈরি এবং সহজবোধ্য তথ্য ও চিত্রের মাধ্যমে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির রোগ সম্পর্কে খামারিদের সচেতন ও শিক্ষিত করে।

অ্যাপটির মূল ফিচার হলো সহজ ভাষায় রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা চিত্রসহ দেওয়া। যারা লেখাপড়ায় দুর্বল, তারাও ছবির মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করতে পারবেন। গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস ও মুরগির সাধারণ ও জটিল রোগের চিকিৎসা পরামর্শ, টিকা প্রয়োগের সময় এবং স্থানীয় ভেটেরিনারি চিকিৎসকের যোগাযোগ তথ্য পাওয়া যায় এতে।

অ্যাপের মাধ্যমে খামারিরা জানতে পারবেন কোন রোগের কী লক্ষণ, কী ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে, টিকা দেওয়ার সঠিক সময়, এবং স্থানীয় পশু চিকিৎসকের খোঁজ। এতে প্রাণির মৃত্যু কমবে, চিকিৎসায় খরচ বাঁচবে এবং খামারির আর্থিক ক্ষতি হ্রাস পাবে।

ডিজিটাল খামারি অ্যাপের নির্মাতা অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান বলেন, গ্রামাঞ্চলে পশু চিকিৎসকের অভাব প্রবল, অনেক সময় দূরবর্তী হাসপাতালেও যাওয়া কঠিন হয়। তাই এই অ্যাপ স্থানীয় চিকিৎসকের নাম-ঠিকানা ও যোগাযোগের সুবিধা দেয়, যা খামারিদের জন্য বড় সহায়ক। খামারিরা সহজেই জানতে পারবেন, গরুর ওলান ফোলা কেন হয়, কৃমিজনিত রোগের লক্ষণ কী, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রতিরোধ কিভাবে করবেন, ইত্যাদি।

‘ডিজিটাল খামারি’ গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনা মূল্যে ডাউনলোড করা যাবে এবং একবার ডাউনলোডের পর ইন্টারনেট ছাড়াও ব্যবহার করা যায়। এতে সচেতনতামূলক কনটেন্ট, রোগভিত্তিক চিকিৎসা নির্দেশনা এবং খামার ব্যবস্থাপনায় সহায়ক তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে এই অ্যাপে লাইভ চ্যাট সাপোর্ট, ভিডিও টিউটোরিয়াল, আরও রোগভিত্তিক তথ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়, এবং খামারের দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনার জন্য ক্যালেন্ডার ফিচার যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক। তিনি আরও জানান, ব্যবহারকারীদের মতামত অনুযায়ী অ্যাপটি নিয়মিত হালনাগাদ ও উন্নত করা হচ্ছে যাতে এটি আরও কার্যকর ও ব্যবহারবান্ধব হয়।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের অর্থায়নে নির্মিত এই অ্যাপ প্রাণীসেবা খাতে প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের উদাহরণ। এটি কেবল তথ্য সরবরাহ নয়, একটি আত্মনির্ভর খামারি গড়ার সহায়ক হাতিয়ার। সরকারের সহযোগিতা ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে এ ধরনের উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়লে খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও পুষ্টি উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখতে পারবে। কারণ, একটি সুস্থ প্রাণী শুধু একটি পরিবারের নয়, সমগ্র জাতির সম্পদ।