- বাঁধ দিয়ে মাছ ধরায় পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে
- খাল দখল হওয়ায় প্রশস্তা কমে গেছে
- বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বিলের শত শত একর ফসল
- আবেদন করলে খাল খনন করা হবে: প্রকৌশলী
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সিধলা ইউনিয়নের বেড়াবিল থেকে সিধলং বিলের তিন কিলোমিটার সংযোগ খাল দখল আর দূষণে ভরাট হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এ অবস্থায় খাল দিয়ে পানি নামতে না পারায় বেড়াবিলের শত শত একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। দখল-দূষণে খালটি সংকোচিত হয়ে ঠিকমতো পানি বের হতে না পারার কারণে কয়েক বছর ধরে কৃষকের ফসলহানি হচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার পাশাপাশি খালটি সংস্কারে উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে বেড়াবিলে পানিতে নিমজ্জিত কৃষকের শত শত একর জমির আমন ধান। পানিতে ডুবে থাকায় পচে যাওয়ার উপক্রম ধানের চারাগুলো। ধার-দেনা করে ফসল লাগিয়ে এমন অবস্থায় দিশাহারা কৃষক।
কুতুবপুর গ্রামের রাকিবুল হাসান বলেন, খালে বাঁধ দিয়ে অনেকে মাছ ধরে; যার কারণে পানি ঠিকমতো প্রবাহিত ঠিক হয় না। এতে গত কিছু দিন ধরে মানুষের জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। খালটি খননে দ্রুত উদ্যোগ নিলে কৃষকের ফসল রক্ষার পাশাপাশি রক্ষা পাবে মাছ ও জীববৈচিত্র্য।
হাসনপুর চৌরাস্তা গ্রামের বাসিন্দা সোহেল মিয়া বলেন, ‘আমি প্রায় দুই একর জমিতে ধান লাগিয়েছি। কিন্তু আমাদের স্বপ্ন পানির নিচে ডুবে রয়েছে। ধানগুলো গত ১৫ দিন আগে লাগানো হয়েছিল। হয়তো আরও দুয়েক দিন পানি থাকলে ধানের চারা পচে নষ্ট হয়ে যাবে। চোখের সামনে এত বড় ক্ষতি মেনে নিতে পারছি না।’
হাসনপুর গ্রামের হাসিম উদ্দিন বলেন, খালটি ১৫-২০ বছর আগেও অনেক চওড়া ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে খালের পাশে বসতি গড়ে উঠছে। আবার কোথাও রয়েছে ঝোপঝাড়। পানি ধীরগতিতে চলে, যার কারণে এক দিন বৃষ্টি হলে তিন লাগে বেড়া বিলের পানি কমতে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বেড়াবিলে পানি গলা পর্যন্ত হয়েছে। এখন পানি কিছুটা কমছে আর ক্ষতি ভেসে উঠছে। আমরা চাই, খালটি দ্রুত খনন করার উদ্যোগ নেক সরকার।
কুতুবপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন, জমির ধান বিক্রি করে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনাসহ সংসারের খরচ চলে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বৃষ্টি হলেই বিলে পানি জমে। এবারের বৃষ্টিতে বিলে গলাপানি হয়েছে। বিলের পানি যে খালটি দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেটি মানুষের দখলের কারণে ছোট হয়ে গেছে। যে যার মতো করে দখল করছে, যার কারণে এ দুর্গতি। সবার স্বার্থে খালটি খনন করা হলে ফসল রক্ষার পাশাপাশে মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।
ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু বলেন, টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে প্রায় ২০ হেক্টর ফসল তলিয়ে রয়েছে। এখন পানি কমায় ক্ষতি ভেসে উঠছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন পাঠানো হবে, সেখান থেকে সহযোগিতা করলে যথাযথভাবে কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খননের কথা জানিয়েছেন ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল। তিনি বলেন, ‘মূলত কৃষি অর্থনীতিকে চাঙা ও কৃষকদের সুবিধার কথা বিবেচনায় গুরুত্ব দিয়ে খাল খনন করা হয়ে থাকে। গৌরীপুরে খাল খনন না হওয়া কৃষকের ফসল হুমকির মুখে সে বিষয়ে আমরা অবগত নই। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আবেদন করে স্থানীয়রা যদি আমাদের অবগত করে তাহলে খানন করতে মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করা হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন