*** ভোগান্তিতে ১৫ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ
*** ধানের চারা রোপণ করে এলাকাবাসীর প্রতিবাদ
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট ইউনিয়নের ধামারখীল সড়কে ধানের চারা রোপণ করে ক্ষোভ ঝাড়লেন এলাকাবাসী। দীর্ঘ ৪৬ বছরেও সংস্কার না হওয়া ১৪ কিলোমিটার কাঁচা সড়কের বেহাল অবস্থার প্রতিবাদে তারা এ অভিনব কর্মসূচি পালন করেন।
সড়কটি নারায়ণহাট ইউনিয়নের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১৫টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে অবহেলা, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও কার্যকর উদ্যোগের অভাবে সড়কটি এখন বড় বড় গর্ত, কাঁদা ও খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সড়কটি যানবাহন চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়ে। সড়কের ভয়াবহ অবস্থার কারণে গ্রামবাসীর জীবনযাত্রা ও জরুরি সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই সড়ককে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে চলছে ‘ভোটের রাজনীতি’। প্রতিটি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচিত হওয়ার পর আর কারো দেখা মেলে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কোনো পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটির বেশিরভাগ অংশই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্ষায় হাঁটাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। মোটরসাইকেলই একমাত্র যানবাহন হিসেবে কোনোভাবে চলাচল করে, কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হলে যাত্রাপথ হয়ে ওঠে চরম কষ্টদায়ক ও ব্যয়বহুল। অ্যাম্বুলেন্স তো দূরের কথা, ভ্যান বা অটোরিকশাও পাওয়া যায় না। স্থানীয়দের অভিযোগ, ন্যূনতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই তারা কার্যত ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পড়েন।
চাঁদপুর, সিংহগাড়া, মাইজকান্দি, জমাদারখীল, চিকনছড়া, দুর্গাবিল ধামারখীল, যৌগ্যারখীল, দৈলারখীল ও কুমারীসহ অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ এই দুর্ভোগের শিকার। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন ৬-৭ কিলোমিটার হেঁটে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় যেতে হচ্ছে তাদের। বর্ষাকালে তা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কেউ কেউ বর্ষাকালে স্কুল-কলেজে যাওয়াও বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জহির উদ্দিন আজম বলেন, ‘এই রাস্তার কাজ শিগগিরই হবে। এমন আশ্বাস পাচ্ছি গত পাঁচ বছর ধরে। এখন জনগণের কাছে যেতে ভয় লাগে। রাস্তাটি আদৌ হবে কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।’
স্থানীয় জামায়াত নেতা এম এ সাত্তার জানান, ‘সড়কটি নাকি ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হলেও তা টেন্ডার পর্যায়ে আটকে আছে। আমরা দ্রুত এ সড়কটি সংস্কার চাই।’
স্কুল শিক্ষার্থী অর্পণ ত্রিপুরা বলেন, ‘গাড়ি না থাকায় আমাদের হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। বর্ষায় কাদার কারণে হেঁটে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। স্কুল ড্রেস নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আলাদা পোশাক পরে যেতে হয়, স্কুলে পৌঁছে তারপর ড্রেস বদলাতে হয়। মেয়ে শিক্ষার্থীরা বর্ষাকালে এই রাস্তার কারণে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।’
স্থানীয়রা বলছেন, আর আশ্বাস নয়, এবার চাই বাস্তব পদক্ষেপ। তাদের দাবি, দ্রুত সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার নিশ্চিত না হলে আন্দোলনে নামতে তারা বাধ্য হবেন। এই অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে রাস্তায় ধানের চারা রোপণ করে এলাকাবাসী যে বার্তা দিয়েছেন, তা যেন কেবল প্রতীকী প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ না থাকে- এটা যেন হয় তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্রথম ধাপ।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী তন্ময় নাথ বলেন, ‘সড়কটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও পূর্ববর্তী সময়ে কোনো প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। উপজেলার পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মধ্যে এটিও একটি। আমরা ইতোমধ্যে একাধিক প্রকল্পে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। গত ১৬ আগস্ট সরেজমিনে গিয়ে সড়কটি পরিমাপ করে তথ্য পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে। আশা করছি চলতি অর্থবছরেই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন