বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বাহারুল ইসলাম, ঝিনাইদহ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৯:২৭ এএম

ওঝার কাছে পরাজিত স্বাস্থ্য বিভাগ

বাহারুল ইসলাম, ঝিনাইদহ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৯:২৭ এএম

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্য

বাদ্যের তালে তালে আর বাঁশির সুরে একে একে ঝুড়ি ও হাঁড়ি থেকে বের হয়ে আসে গোখরোসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপ। পালাসহ বিভিন্ন গানের সঙ্গে বাদ্যের তালে সাপুড়েকে নিজে নাচতে হয় আর সঙ্গে ফণা তুলে সাপও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে। সাপুড়ের ইশারায় সাপের এই অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন মানুষকে দেয় অনাবিল আনন্দ। সাধারণত এ ধরনের খেলাকে ঝাঁপান খেলা (সাপ খেলা) বলা হয়। এ খেলা বা প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন এলাকার একাধিক সাপুড়ে গ্রুপ অংশ নেয়।

বিষধর সাঁপ দেখে মানুষ ভয় পায়, অথচ সেই সাঁপ নিয়েই আবার খেলা দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দিতে গিয়ে ও বিভিন্নভাবে সাপের কামড়ে ঝিনাইদহে কয়েক বছরে রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মৃত প্রায় সবার ক্ষেত্রেই সাপে কাটলে হাসপাতালে না গিয়ে ওঝার কাছে নিয়ে ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে।

জানা যায়, সাপে কামড়ালে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসা নিলে রোগীর মৃত্যুর শঙ্কা অনেকাংশেই থাকে না। বর্তমানে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায়। কিন্তু এ জেলায় হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটা। বিশেষ করে সাপে কাটা রোগীকে ওঝার বাড়িতে ঝাড়-ফুঁক করে যন্ত্রণা উপশম না হলে শেষ সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন রোগীকে বাঁচাতে চিকিৎসকের হাতে আর সময় থাকে না। ফলে ঝিনাইদহের স্বাস্থ্য বিভাগ ওঝার ঝাড়-ফুঁকের কাছে পরাজিত হচ্ছে। এ জনপদের মানুষকে কিছুতেই ওঝাগিরির বিশ্বাস থেকে সরানো যাচ্ছে না।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল ও সিভিল সার্জন ডা. মো. কামরুজ্জামান ওঝাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও পুলিশকে নির্দেশনা দেন। সাপে কাটলে ওঝাদের কাছে না নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাইকিং করার প্রস্তাবনাও রাখা হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের নির্দেশনার পরেও ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু ও সদর উপজেলায় তিনটি ঝাঁপান খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন তাদের কোনো বাধা দেয়নি। পুলিশও এ বিষয়ে অবগত নয় বলে জানিয়েছে।

উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উচ্চবাচ্যের পর গত ১৪ ও ১৫ আগস্ট সদর উপজেলার বৈডাঙ্গা গ্রামে দুই দিনব্যাপী ঝাঁপান খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই খেলার আয়োজন করেন ওই এলাকার প্রেম কুমার নামের এক ব্যক্তি। গত ১৮ আগস্ট হরিণাকু- উপজেলার চিতলাপাড়ায় ঝাঁপান খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট সদর উপজেলার সাগান্না গ্রামে সাপের ওঝা তৈয়ব আলী ফকিরের আয়োজনে ঝাঁপান খেলা অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার দর্শক এই খেলা দেখতে আসেন।

এদিকে দেশের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী সাপ ধরা বা খেলা দেখানো একটি অপরাধ, কারণ এই আইনের অধীনে বন্য প্রাণী সংগ্রহ, আটকে রাখা ও প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বন্য প্রাণি আইন ২০১২-এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী, সাপ একটি সংরক্ষিত প্রাণী এবং এর খেলা দেখানো বা প্রদর্শনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এই আইনের বাস্তবে প্রয়োগ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর হরিণাকু-ু উপজেলার ফলসি গ্রামের দুলাল বারী নামের এক বৃদ্ধকে সাপে কামড়ায়। পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে না নিয়ে ওঝার শরণাপন্ন হন। ওঝা মোবাইল কলের মাধ্যমেই ঝাড়-ফুঁক করে বিষ নামিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। শুধু রোগীকে ভাটির পাতা রস করে খাওয়াতে বলেন; কিন্তু ২২ সেপ্টেম্বর দুলাল বারী মারা যান। ২০২৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের কোলা গ্রামের তুফান ম-ল নামে এক শৌখিন সাপ পালনকারী পোষা সাপের কামড়ে মারা যান। গত ১০ মে শৈলকুপা উপজেলার খুলুমবাড়িয়া গ্রামের কাদের খন্দকার (৮০) নামের সাপের ওঝা সাপের কামড়ে মারা যান। তিনি তার পোষা সাপকে পানি পান করাতে গিয়ে দংশনের শিকার হন। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার মহেশপুরে সাপের কামড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

সাপ একটি বিপজ্জনক বন্য প্রাণী উল্লেখ করে বিষধর সাপসহ অন্য বন্য প্রাণী উদ্ধারের কাজ করা বোরহান বিশ্বাস রোমন বলেন, সাপে কাটার চিকিৎসা হাসপাতালে করানোর রীতির সঙ্গে ঝাঁপান খেলা সাংঘর্ষিক। ঝাঁপান খেলা মানুষের ওঝার প্রতি মিথ্যা বিশ্বাস তৈরি করে। ঝাঁপান খেলা বন্ধ করা উচিত। এটা দেশের আইন অনুযায়ী একটি দ-নীয় অপরাধ। প্রশাসন চাইলে আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।

ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. কামরুজ্জামান বলেন, ওঝা সাপের বিষ নামাতে পারেন এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। সাপ অনেক সময় ড্রাই বাইট করে থাকে। তবে রোগীকে সাপে কামড়ানোর দু-এক ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিলে রোগীর মৃত্যুর শঙ্কা থাকে না। ঝিনাইদহে সাপে কেটে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। অধিকাংশ রোগীকেই ওঝার বাড়িতে নিয়ে সময় নষ্ট করে শেষ সময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

তিনি আরও বলেন, গত জেলা সমন্বয় সভায় ওঝাগিরি বন্ধে জেলা প্রশাসক ও আমি সব ইউএনও, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও পুলিশকে ওঝাগিরিতে মানুষের বিশ্বাস তৈরি হয় এমন কর্মকা- রোধ করতে বলা হয়। কিন্তু তার পরেও দুই উপজেলায় ঝাঁপান খেলা অনুষ্ঠিত হয়। যা খুবই দুঃখজনক।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!