*** এক সপ্তাহে সাপের কামড়ে মৃত্যু ২
*** গত ৮ মাসে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় ৩৭ জন সাপে কামড়ানো রোগী
*** অ্যান্টিভেনাম না থাকায় ওঝার বাড়িতে ছুটছেন মানুষ
*** দ্রুত অ্যান্টিভেনাম সরবরাহের দাবি স্থানীদের
যশোরে কোনো সরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিভেনাম (সাপে কামড়ের প্রতিষেধক ওষুধ) নেই। দীর্ঘ এক বছর ধরে সরকারিভাবে সরবরাহ বন্ধ থাকায় এই শূন্যতা তৈরি হয়েছে। অ্যান্টিভেনামের অভাবে বিষধর সাপের কামড়ে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। গত ১ সপ্তাহে যশোরে সাপের কামড়ে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো- সদর উপজেলার ইছালী ইউনিয়নের ডাঙ্গাবয়রা গ্রামের জুয়েল রানার স্ত্রী তামান্না খাতুন (২০) ও মণিরামপুর উপজেলার বিজয়রামপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আজিম (৩)।
জানা গেছে, যশোরে সাপে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ৮ মাসে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৭ জন সাপে কামড়ানো রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সাপের কামড়ের রোগী বাড়লেও অ্যান্টিভেনাম না থাকায় মানুষের মাঝে হতাশা বেড়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসার ওপর আস্থা হারিয়ে মানুষ ঝাড়ফুঁকের জন্য ওঝার বাড়িতে ছুটছেন।
জানা জায়, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, যশোর সদর, শার্শা, ঝিকরগাছা, চৌগাছা, মণিরামপুর, কেশবপুর, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারিভাবে অ্যান্টিভেনাম সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অ্যান্টিভেনাম না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কামড়ানো রোগী গেলেই জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে অ্যান্টিভেনাম কিনে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করছে।
রোগীর স্বজনদের ভাষ্যমতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সাপে কামড়ের রোগীর কোনো চিকিৎসা নেই বললেই চলে। সেখানে রোগী নেওয়া হলেই যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।
যশোর সদরের ডাঙ্গাবয়রা গ্রামের জুয়েল রানা জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে বিষধর সাপ তার স্ত্রী তামান্নার বাম হাতের আঙুলে কামড় দেয়। তার চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেলে সাপে কামড়ানোর বিষয়টি বুঝতে পারেন। প্রতিবেশীদের সহায়তায় তামান্নাকে স্থানীয় এক ওঝার কাছে নেওয়া হয়। ঝাড়ফুঁকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তামান্নাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে গত ১ সেপ্টম্বর রাতে মণিরামপুর জয়রামপুর গ্রামে সাপের কামড়ে মারা যায় আজিম নামের ৩ বছরের এক শিশু। শিশুর পিতা আব্দুর রহমান জানান, তিনি সপরিবারে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তারা ঘরের মেঝেতে ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় বিষধর সাপে তার মেয়ে হালিমা (৮) ও ছেলে আজিমকে (৩) কামড় দেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে তাদের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে অ্যন্টিভেনাম না থাকায় চিকিৎসক তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। উপায় না পেয়ে তাদের চালকিডাঙ্গা গ্রামের এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার পর আজিমের মৃত্যু হয়। পরে হালিমাকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আব্দুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অ্যান্টিভেনামের অভাবে তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসাসেবা পেলে হয়তো তার শিশুসন্তান বেঁচে যেত।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, সরকারিভাবে অ্যান্টিভেনাম সরবরাহ নেই। তবে সাপে কামড়ানো রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নিজস্বভাবে কিছু অ্যান্টিভেনাম কেনা হয়েছে। বর্তমানে ৯০টি অ্যান্টিভেনাম স্টোরে মজুত আছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন