করাতকল স্থাপনে লাইসেন্স নিতে হয় বন বিভাগ থেকে। লাগে পরিবেশ অধিদপ্তরে ছাড়পত্র। মানতে হয় আরও নির্দিষ্ট কিছু বিধিমালা। টাঙ্গাইলের সখীপুরে এসবের কোনো তোয়াক্কা নেই। নিয়ম-নীতি না মেনে যত্রতত্র গড়ে উঠছে অবৈধ শতাধিক করাতকল। এসব করাতকলে হরহামেশা কাটা হচ্ছে চোরাই কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে সড়কের পাশের সরকারি গাছ ও সরকারি-বেসরকারি বনাঞ্চল। ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেও অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে কিছু করাতকল। এ কারণে শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব অবৈধ করাতকল থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
অথচ স মিল (লাইসেন্স) বিধিমালা-২০১২ অনুযায়ী, কোনো মালিক লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না। আর লাইসেন্স নেওয়ার পর প্রতিবছর তা নবায়ন করতে হবে। আবার কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্কের ২০০ মিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু তা মানছেন না বেশির ভাগ করাতকলের মালিক।
জানা যায়, উপজেলায় শতাধিক করাতকল আছে। এর মধ্যে মাত্র ১২টির লাইসেন্স আছে। সম্প্রতি কয়েকজন লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করেছেন।
বেশ কয়েকটি করাতকল ঘুরে দেখা গেছে, মিল চালানোর ক্ষেত্রে বিধি-বিধান মানছেন না করাতকলের মালিকরা। অনেকেই ১০-১৫ বছর ধরে অনুমোদন ছাড়াই চালাচ্ছেন করাতকল। করাতকলের চত্বরে মজুত রাখছেন বিভিন্ন প্রজাতির চোরাই গাছ। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে কাঠ কাটার কাজ। এ সময় সরকারের অনুমোদনহীন এসব করাতকল বন্ধ করার কোনো উদ্যোগও চোখে পড়েনি। এতে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিটি করাতকল থেকে স্থানীয় বন বিভাগ ২ থেকে ৫ হাজার টাকা করে মাসিক চাঁদা নেন। যে টাকা বিট কর্মকর্তা থেকে শুরু করে রেঞ্জারের পকেটে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক করাতকল মালিক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের স মিল চলছে। আবেদন করেছি, কিন্তু এখনো অনুমোদন পাইনি।’ তাহলে এখন কীভাবে কল চলছে? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বন বিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে মিল চালাচ্ছি।’ তাদের মাসিক চাঁদা দিতে হয়। জেলা থেকে কোনো অভিযান এলে এরা আমাদের আগেই জানিয়ে দেয়।
কাঠ ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, ‘আমরা কাঠের ব্যবসা করি। এই ব্যবসা করে আমাদের সংসারের খরচ চলে। মিলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। আমরা দেখি, মাঝেমধ্যে বন বিভাগের লোকজন এসে মিল থেকে টাকা নিয়ে যায়। এতে মিল মালিকদের আর কোনো ঝামেলা হয় না।’ একই ধরনের কথা বলেন কাঠ ব্যবসায়ী রফিক ও তৈয়ব মিয়া।
আরেক কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ের ছোট কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাঠ কিনে ব্যবসা করি। তবে তারা কোথা থেকে কাঠ নিয়ে আসে জানি না।
এ বিষয়ে বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা এমরান আহম্মেদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন