উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং বৃষ্টিপাতের ফলে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তায় পানি বেড়েছে ২৩ সেন্টিমিটার এবং গত দুই দিনে প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়েছে বন্যা আতঙ্ক।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, যদি এমনভাবে পানি বাড়তেই থাকে, তাহলে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের নিচু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, গত রোববার সকাল ৬টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং আজ সোমবার সকাল ৯টায় সেই পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য ও সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ভারতের উত্তর তেলেঙ্গানা ও সংলগ্ন অঞ্চলে স্থল লঘুচাপ হিসেবে অবস্থান করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগে এবং উজানে ভারতের ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম প্রদেশে ভারি থেকে অতি-ভারি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা (১৪ সেপ্টেম্বর ০৯.০০টা থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর ০৯.০০টা পর্যন্ত) দেশের রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, বিহার ও ত্রিপুরা প্রদেশে বিচ্ছিন্নভাবে ভারি থেকে অতি-ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৩ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে। এ সময়ে তিস্তা ও দুধকুমার নদীসমুহ বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নি¤œাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাত থেকেই তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। নদীর পাশের গ্রামগুলোতে ইতোমধ্যে পানি ঢুকে গেছে। অনেক এলাকায় ফসলি জমিতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টের পানির লেভেল পরিমাপক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে আপাতত বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নদীপাড়ের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন