- এক সপ্তাহে অন্তত ৪টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন
- ৩ শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত
- এভাবে চলতে থাকলে পুরো ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে
সর্বনাশা পদ্মা আবারও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ অঞ্চলের মানুষের জন্য। ভয়াবহ ভাঙনে গত এক সপ্তাহে ইউনিয়নের অন্তত চারটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে তিন শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের হঠাৎপাড়া, চর বয়ারমারি, কামারপাড়া, জামাইপাড়া ও আমতলা খাসমহল এলাকায় দেখা যায়, মানুষজন ঘরবাড়ি ভেঙে মালামাল নৌকায় তুলছেন। কারো বাড়ির অর্ধেক নদীতে ধসে পড়েছে, কেউ আবার হিমশিম খাচ্ছেন মালামাল সরাতে। ভাঙনে ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো এলাকা তলিয়ে গেছে নদীতে।
জামাইপাড়া গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন, ‘পদ্মার ভাঙনে দুইবার বাড়ি সরাইছি। এবার আর চরে থাকার জায়গা নাই। ভাইয়ের বাড়িতে ওপারে চলে যাইতেছি।’
হঠাৎপাড়া গ্রামের আশরাফুল হক জানান, ‘১৫ বছর আগে একবার ভাঙনে বাড়ি সরাইছিলাম। এবার আর থাকার জায়গা নাই। বাইপাস মোড়ে জমি কিনছি, সেখানে যাচ্ছি।’
নৌকায় মালামাল নিয়ে পার হচ্ছিলেন বয়ারমারি গ্রামের গৃহবধূ রোজিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘ছয় বছর আগে একবার বাড়ি ভাইঙছিল। জন্মের পর থেকে চরে থাকতেছি, কিন্তু এবার আর থাকা হলো না। ভাসুরের বাড়িতে উঠমু, পরে জমি কিনে আবার ঘর করমু।’
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন বেড়েছে। অন্তত ৩০০ পরিবার চরের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। আমরা শুধু ১০ কেজি করে চাল দিতে পেরেছি। যাদের সবকিছু নদীতে গেছে, তাদের কাছে এটা কিছুই না। সরকারকে দ্রুত পাশে দাঁড়াতে হবে।’
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ১১০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। তালিকা প্রক্রিয়া চলছে। পুনর্বাসনের জন্য ঢেউটিন দেওয়া হবে।’
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, রাজশাহী শহরসংলগ্ন পদ্মার বিপৎসীমা ১৮.০৫ মিটার। গত সপ্তাহে পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৭.৪৯ মিটার। গতকাল পানি নেমে দাঁড়িয়েছে ১৬.৮৫ মিটারে। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন আরও তীব্র হচ্ছে।
৩৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নটি পদ্মার বিশাল জলরাশির ওপারে, ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা এলাকা। প্রতিবছরই ভাঙনে ইউনিয়নের জমির পরিমাণ কমছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে একসময় পুরো ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।