ঢাকা বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পাটের দামে  খুশি কৃষক

সেলিম রেজা, নকলা (শেরপুর)
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ০২:০৮ এএম

শেরপুরের নকলায় চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও বাজারে ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাট উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক চাষিদের প্রশিক্ষণ ও সার্বিক পরামর্শ দেওয়ায় সময়মতো পরিচর্যা করায় এবার পাটের তেমন কোনো রোগবালাই হয়নি।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাট উন্নয়ন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে উপজেলায় মোট ৫০৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় ৯৯০ একর জমিতে কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে পাট চাষ করানো হয়।

উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা তাহমিনা ইয়াসমিন বলেন, এ বছর উপজেলার ৩ হাজার কৃষককে পাট চাষের জন্য কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। প্রতি কৃষককে এক কেজি করে বিজে আরআই-৮ তোষা পাটের বীজ এবং প্রতিজনকে ১২ কেজি করে বিভিন্ন রাসায়নিক সার দেওয়া হয়েছে। পরিমিত পরিমাণে বৃষ্টি, সহজপ্রাপ্য মজুরি ও পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এবার লাভবান হবেন। আগামীতে পাঠ চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা বাড়বে বলে আশাব্যক্ত করেন এই পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা।

সরেজমিনে উপজেলার মোছারচর, বানেশ্বরদী, বাছুরআলগা, নারায়ণখোলা, পাঠাকাটা ও ভূরদীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব এলাকার পাট চাষিরা পাটখড়ি থেকে সোনালি আঁশখ্যাত পাট ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। তাদের মধ্যে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

বানেশ্বরদী গ্রামের আলী হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন, মোজার বাজার এলাকার আরিফ হোসেন, জালালাপুর এলাকার কামাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাটের বাজারে দরপতন, চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে কৃষকরা পাট চাষের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে দিন দিন পাটের আবাদ কমছে।

ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব মো. ছায়েদুল হক জানান, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, শ্রমিক স্বল্পতা ও মজুরি বেশি, জাগ দেওয়ার পানির অভাবসহ বিভিন্ন কারণে দিন দিন পাট চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ ক্রমেই কমছে। 

অনেকে জানান, কৃষকরা পাট চাষ ছেড়ে শাক-সবজিসহ অন্যান্য কৃষি আবাদের দিকে ঝুকছেন। কৃষি প্রণোদনা প্রকৃত কৃষকের মাঝে সঠিকভাবে বিতরণ না করায় পাটের আবাদ কমার একটি উল্লেযোগ্য কারণ বলে মন্তব্য করেন তারা। যদিও অনেকে জানান, কৃষি প্রণোদনা দেওয়ায় উপজেলায় দিন দিন পাটের আবাদ বাড়ছে। তবে বিভিন্ন তথ্য মতে, উপজেলায় পাট আবাদের পরিমাণ গত কয়েক বছর ধরেই এক প্রকার স্থির রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুনসালীন মেহেদী জানান, অল্প ব্যয়ে স্বল্প শ্রমে কম সময়ে বেশি লাভের আশায় উপজেলার অনেক কৃষক ধানসহ অন্যান্য আবাদের পাশাপাশি পাট চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এ বছর উপজেলায় মোট ৫০৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে তোষা জাতের পাট ৪২০ হেক্টরে, দেশি জাতের পাট ৪৫ হেক্টর, মেস্তা জাতের পাট ২২ হেক্টর ও কেনাফ পাট ২০ হেক্টর জমিতে চাষ করেছেন কৃষক।

উপজেলার চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর, টালকী, পাঠাকাটা ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নের কৃষকরা বরাবরের মতো এবারো পাটের আবাদ বেশি করেছেন। তবে পৌরসভা, গনপদ্দী, নকলা, উরফা ও গৌড়দ্বার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পাট চাষের উপযোগী জমিতে বিভিন্ন জাতের পাটের আবাদ হয়েছে বলে তিনি জানান। পাটের বাম্পার ফলন হওয়ায় নকলার কৃষকেরা এখন সোনালি আঁশের সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন বলে জানান কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুনসালীন মেহেদী।