- সব ঘটনায় তদন্ত হলেও ব্যবস্থা নেই
- মাসোহারা নিয়ে অবৈধ ক্লিনিককে চালাতে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ
- জেলার ৮৯টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পাওয়ার অযোগ্য হলেও কার্যক্রম চালাচ্ছে
যশোরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসকের ভুল অস্ত্রোপচার ও অপচিকিৎসায় অন্তত ২০ রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিটি ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে নামমাত্র লাইসেন্সধারী কিংবা অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোয় অপচিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জন অফিসের দুজন কর্মচারী মাসোহারা নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালাতে সুযোগ করে দিচ্ছেন।
২০২৪ সালের ৩১ জুলাই শহরের পঙ্গু সেবা কেন্দ্রে ডা. নজরুল ইসলামের ভুল অপারেশনে মারা যান সদর উপজেলার হাশিমপুর গ্রামের তরফদারপাড়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে রসুল ওরফে রাসেল (৩৬)। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা হট্টগোল করলে সিভিল সার্জনের নির্দেশে তদন্ত কমিটি হয়।
গত ৩০ জুন অভয়নগর উপজেলার ফাতেমা প্রাইভেট হসপিটালে ভুল সিজারে মারা যান ইতি বেগম (২২)। একই দিন নওয়াপাড়ার আরোগ্য সদন প্রাইভেট ক্লিনিকে মারা যান প্রসূতি অর্চনা (২৫)। উভয় ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া সদর উপজেলার কাজল, রিমা, রুনা বেগম, শিশু ইরহাম, মীম খাতুনসহ আরও কয়েকজন রোগীর মৃত্যু হয় সিজার কিংবা চিকিৎসা অবহেলায়। প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত হলেও প্রতিবেদন ফাইলবন্দি থাকে।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, যশোরে মোট ৩০৯টি নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। তবে খাতায়-কলমে নেই এমন আরও অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান চলছে অবৈধভাবে। ২০২১ সালে লাইসেন্স নবায়নে অনেকে আবেদন না করায় ৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিল তৎকালীন সিভিল সার্জন। তবু প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে যশোর শহরের পিস হসপিটাল, রোটারি হেলথ সেন্টার, সেন্ট্রাল হসপিটাল ল্যাব, নুরুল ইসলাম ডায়াবেটিক সেন্টার, মণিরামপুরের মডার্ন ক্লিনিক, রাজগঞ্জ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কপোতাক্ষ ক্লিনিক, বেনাপোলের স্টার ডায়াগনস্টিক ও ঝিকরগাছার ফেমাস মেডিকেল সেন্টারসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ আছে, সিভিল সার্জন অফিসের দুজন কর্মচারী মাসোহারা নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে চলতে দিচ্ছেন। লাইসেন্স নবায়নে ৫০ হাজার টাকা ও নতুন লাইসেন্সে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক মালিকদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়ের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। তবে কেউ জড়িত প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভুল অস্ত্রোপচার ও অপচিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। তদন্তের পর দায়ীদের অবশ্যই শাস্তি দেওয়া উচিত।’