ঢাকা বুধবার, ০১ অক্টোবর, ২০২৫

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দিশাহারা মানুষ জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ

মহসিন রেজা রুমেল, দেওয়ানগঞ্জ
প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২৫, ০১:০৬ এএম
  • বাহাদুরাবাদের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে তীব্র ভাঙন
  • অসময়ের ভাঙনে বিলীন ফসলি জমি, বসতবাড়ি, প্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা
  • ভিটা-মাটি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। একের পর এক ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও গ্রাম গ্রাস করছে। এরই মধ্যে এই ধান, মরিচ, বাদাম, সবজিসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসলের কয়েকশ হেক্টর জমি নদীতে চলে গেছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। ঝুঁকিতে রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল ও সিনিয়র মাদ্রাসা, মসজিদ, হাট-বাজার, ব্রিজ ও কয়েক হাজার বসতভিটা। স্থানীয়রা বলছেন, যেভাবে ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে পুরো একটি ইউনিয়নটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের সরদারপাড়া দফাদারের ঘাট থেকে পোল্যাকান্দি ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই সপ্তাহের ভাঙনে ফারাজিপাড়া গ্রামের ৭টি, প্যোল্যাকান্দি মধ্যপাড়া গ্রামের ৫টিসহ ১২টি বসতবাড়ি নদে বিলীন হয়ে গেছে। এরই মধ্যে এই ধান, মরিচ, বাদাম, সবজিসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসলের কয়েকশ হেক্টর জমি নদীতে চলে গেছে। ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে সরদারপাড়া, ফারাজিপাড়া, পূর্ব ফারাজিপাড়া, পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়া, নামাপাড়া গ্রামের শত শত বসতবাড়ি, ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি আলিম মাদ্রাসা, পোল্যাকান্দি সেতু, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বহু স্থাপনা। এতে আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী।

সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরজমিনে দেখা যায়, ব্রক্ষপুত্র নদের পশ্চিমপাড় ঘেঁষে বইছে প্রবল স্রোত। তীব্র স্রোত থাকায় ক্রমাগত ভাঙছে নদের পাড়। স্থানীয়রা জানায়, গত কয়েক বছরের ভাঙনে নদীতে চলে গেছে সরদারপাড়া, ফারাজিপাড়া, পূর্ব ফারাজিপাড়া, পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়া, নামাপাড়া গ্রামের অন্তত ১৫০-২০০ বসতবাড়ি। এ ছাড়া বিলীন হয়েছে কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি, বিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বহু স্থাপনা।

এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ। 

ফারাজিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজম আলী বলেন, ‘গত কয়েক দিন আগে আমার বসতভিটা নদে বিলীন হয়ে গেছে। আমি ছাড়াও এলাকার আমের আলী, বুদু, বাশতাল্লি, আসাদুল, আহালু মেম্বার, মোখলেসুর রহমান ধলার বাড়ি কয়েক দিনের ব্যবধানে নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন আমরা আশ্রয়হীন। আমাদের বড় দুঃখের কপাল। আগে আমাদের বসতভিটা ও আবাদি জমি সব ছিল। সর্বনাশা ব্রহ্মপুত্র সব কেড়ে নিয়েছে। এখন সহায়-সম্বলহীন। অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। এ সময় ব্রক্ষপুত্রের ভাঙন থেকে গ্রামগুলো রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।’

চলতি সপ্তাহে পূর্ব ফারাজিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিন মিয়ার ঘর নদে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আমার ঘরবাড়ি চারবার নদের ভাঙনের কবলে পড়ল। ভাঙন শুরু হলে রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সরদারপাড়া, ফারাজিপাড়া, পূর্ব ফারাজিপাড়া, পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়া, পোল্যাকান্দি নামাপাড়া গ্রামসহ পুরো ইউনিয়ন নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।’ 

মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক আয়নাল হক বলেন, ‘একসময় আমাদের আবাদি জমি ও বসতভিটা সবই ছিল। চলতি মৌসুমে সাড়ে ৪ বিঘা ধানের আবাদ করেছিলাম তাও গত দুই সপ্তাহে বিলীন হয়েছে। সর্বনাশা ব্রক্ষপুত্রের ভাঙনে আমার সবই বিলীন হয়ে গেছে। এখন অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকি। দিনমজুরি করে দিনযাপন করছি। আমাদের দুঃখ এত দিনেও ঘুচল না। এখন অসময়ে ভাঙন শুরু হয়েছে, মাথা গোঁজার শেষ জায়গাটুকুও বুঝি শেষ হয়ে যায়।’

বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া বলেন, তীব্র স্রোতের কারণে অসময়ে ব্রক্ষপুত্রে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে দাবি জানিয়েছি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান জানান, বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোর জন্য ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে বরাদ্দ চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙনকবলিত এলাকায় বিআইডব্লিউটিএর কার্যক্রম চলমান রয়েছে, তারা ভাঙনরোধে সাময়িক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আশা করছি, ভাঙন রোধে দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে।