ঢাকা বুধবার, ০১ অক্টোবর, ২০২৫

ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

সাবেক এমপির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২৫, ০১:০৮ এএম

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার চাঁন্দপুর, দিনামণি, ভূনা এবং ম-লভোগ মৌজার প্রায় ১৩০ একর জমি ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে চলছে দখলদারিত্ব, হামলা-মামলা ও হয়রানির অভিযোগ। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, তারা ওই জমিতে ‘বরকত আল-আমিন অ্যাগ্রো কমপ্লেক্স’ নামে একটি প্রকল্প চালু করে মৎস্য ঘের ও বৃক্ষরোপণ করলেও সাবেক সংসদ সদস্য (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) এবং তৎকালীন পুলিশের আইজিপি নূর মোহাম্মদ তার প্রভাব খাটিয়ে জমিটি দখল করে নেন।

এমন অভিযোগ এনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার একটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী নুরুল আমিনের পরিবারের লোকজন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নুরুল আমিনের ছেলে সিরাজুল আমিন, ভাগ্নে কাজল মিয়া, নুরুল আমিনের ভাইয়ের স্ত্রী সাবিহা রুহুল রুবি, আরেক ভাইয়ের স্ত্রী খুসনাহার বেগম।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে সিরাজুল আমিন বলেন, ‘২০০৮ সালের শেষের দিকে নূর মোহাম্মদ তার ভাগিনা আজিজুর রহমান মুন ও সহযোগী শাওনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী দিয়ে জোরপূর্বক প্রকল্পটি দখল করে নেন। এরপর থেকেই তারা নানাভাবে হয়রানি ও প্রাণনাশের হুমকির শিকার হতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রাণ বাঁচাতে প্রকল্প মালিক আমার বাবা নুরুল আমিন বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হন।’

২০১২ সালে তারা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন, কিন্তু কোনো প্রতিকার মেলেনি। ২০১৬ সালে আদালতে মামলা করলে সহকারী জজ আদালত প্রকল্পের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তবে আদালতের আদেশ অমান্য করে দখলদাররা প্রায় শতকোটি টাকার বালু ও গাছপালা বিক্রি করেছেন। বর্তমানে ওই প্রকল্পে ইটভাটা, অবৈধ লিজ ও নানা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জমি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করলেই হামলা-মামলার শিকার হতে হয় তাদের। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের সহযোগিতায় মুন বাহিনী অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ও একাধিকবার গুলি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের আহত করেছে। এ ছাড়া মিথ্যা মামলা ও হয়রানির কারণে পরিবারটি গ্রামে যেতেও পারছিলেন না। গত বছর ঢাকায় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করার পর ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের ওপর নতুন করে দমন-পীড়ন শুরু হয়। গত ১২ ডিসেম্বর রাত ৩টায় তাদের বেশ কয়েকজন আত্মীয়কে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়। তবে আদালতে প্রমাণ না থাকায় তারা জামিনে মুক্তি পান।

২০২৫ সালের জুলাই মাসে এলাকাবাসী নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অবৈধ বালু উত্তোলনের ঘটনায় কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নিলে এলাকাবাসী বালু উত্তোলন বন্ধে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু পরে সাবেক এমপি পুলিশি প্রভাব খাটিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখেন। এ নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হলেও ভয়ে সরাসরি মুখ খোলেন না।

ভুক্তভোগী পরিবার বলছে, নূর মোহাম্মদ প্রকাশ্যে বলেছেন জমির সঙ্গে তার আত্মীয়স্বজনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। অথচ নতুন করে মামলায় তার ভাগিনা মুনকে জমির মালিক দেখানো হয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন- তাহলে জমির সত্যিকার মালিক কে? ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, সাবেক এমপি ও তার আত্মীয়স্বজনের প্রভাবের কারণে তারা বছরের পর বছর নিজের জমি থেকে বঞ্চিত, নানাভাবে নির্যাতিত এবং মিথ্যা মামলার শিকার। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ন্যায়বিচার থেকে তারা বঞ্চিত।

নুরুল আমিনের ভাইয়ের স্ত্রী সাবিহা রুহুল রুবি বলেন, ‘আমরা আদালতের আদেশও কার্যকর করতে পারছি না। আমাদের জমি, আমাদের প্রকল্প সবকিছুই জোর করে দখল করে নেওয়া হয়েছে। এখনো তারা প্রভাব খাটিয়ে আমাদের হয়রানি করছে।’

এ বিষয়ে জানতে সাবেক আইজিপি ও এমপি নূর মোহাম্মদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।