ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

ওএমএস পণ্য কিনতে মধ্যরাত থেকে লাইন

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৪:০২ এএম

*** দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনেকে ফিরেছেন খালি হাতে

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারি খোলাবাজারে (ওএমএস) অর্ধেক দামে চাল-আটা কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন নি¤œ আয়ের মানুষ। রাজশাহীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিদিন সকালে ট্রাক থেকে খাদ্যদ্রব্য কিনতে অনেকে মধ্যরাত কিংবা ভোররাত থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে যান। রাজশাহী নগরের চৌদ্দপাই এলাকায় গতকাল বুধবার সকালে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনেকে খালি হাতে বাসায় ফিরেছে। নি¤œ আয়ের মানুষের ওএমএস খাদ্যপণ্য একমাত্র ভরসা। সেটি কিনতে তারা ভোর থেকে অপেক্ষা করেন।

রাজশাহী নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে সাপ্তাহিক ছুটি বাদে পাঁচ দিন ওএমএস চাল-আটা বিক্রি করা হয়। প্রতি ট্রাকে এক টন চাল ও এক টন আটা বরাদ্দ থাকে। একজন সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল (প্রতি কেজি ৩০ টাকা) এবং ৫ কেজি আটা (প্রতি কেজি ২৪ টাকা) কিনতে পারেন। কিন্তু বিপুল ভিড়ের কারণে সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয় না। চৌদ্দপাই এলাকায় দুপুরের আগেই ট্রাকের চাল-আটা শেষ হয়ে যায়। সকালবেলা আসা অনেকেই খালি হাতে ফিরে যান।

বুধপাড়ার বাসিন্দা রোজেনা বেগম রাত ৩টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চাল-আটা কেনার সুযোগ পান। তিনি বলেন, ‘একজনের আয়ে চার-পাঁচজনের সংসার চলে না। গভীর রাতে না আসলে তো খাবার জুটবে না। তাই বাধ্য হয়েই রাত থেকে আসি।’

হনুফার মোড়ের চায়না বেগম বলেন, ‘আমরা কারো হক মারতে চাই না। সবাই যেন খেতে পারে, এটাই চাই। কিন্তু হক মেরে খাচ্ছে অনেকে। তাই রাতেই আসি।’

লাইনে দাঁড়ানোদের মধ্যে বেশির ভাগই প্রবীণ নারী ও বয়স্ক মানুষ। হাতে টুল, পিঁড়ি নিয়ে তারা রাত কাটান ট্রাকের অপেক্ষায়। পুরুষদের চেয়ে বয়স্ক নারীদের উপস্থিতি বেশি চোখে পড়ে।

ভোর ৫টার দিকে লাইনে দাঁড়ান মো. ইসলাম লাইনে। তিনি বলেন, ‘ভোরে না এলে চাল-আটা মেলে না। না পেলে খালি হাতেই চলে যেতে হয়। অনেকে মধ্যরাতে এসেই ঘুমায়। আমরা ভোর থেকে আছি লাইনে, ভাগ্যে থাকলে পাব, না হলে আবার আসব।’ চৌদ্দপাই এলাকার ডিলার শামীম হোসেন বলেন, ‘রাত ১২টা বা ১টার দিকেই অনেকে এসে পড়েন। নিষেধ করলেও শোনেন না। এখানে প্রয়োজনের দ্বিগুণ মানুষ আসে। তাই আমরা বরাদ্দ বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছি।’

উপ-খাদ্য পরিদর্শক রিপন আলী জানান, ‘লোকসমাগম অনেক বেশি হওয়ায় সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয় না। সর্বোচ্চ ২০০ জনকে দেওয়া যায়। তবে এই এলাকায় বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’