নেত্রকোনার হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরীতে তীব্র লোডশেডিংয়ে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহের দীর্ঘদিনের ঘাটতি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থার কারণে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, রোগী ও হাসপাতাল কর্মীরা চরম অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন।
স্থানীয় শিক্ষক সৈয়দা শিমু সম্প্রতি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কি আজব জায়গা, খালিয়াজুরীতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকে না দুই ঘণ্টাও।’ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা জানান, অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। খালিয়াজুরী মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মেহেরিন আক্তার বলে, ‘শহরের শিক্ষার্থীরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছে, আর আমরা প্রতিদিন ধুঁকছি ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে। অনলাইনে ক্লাস করা বা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্র চন্দ্র সরকার জানান, গত জুলাইয়ে প্রকাশিত এসএসসি ফলাফলে বিদ্যালয়ের পাসের হার মাত্র ২৬.১৪ শতাংশ। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দীর্ঘদিনের সংকট শিক্ষার্থীদের ফলাফলে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, বাজারের ব্যবসায়ী ও হাসপাতাল রোগী-চিকিৎসকরাও লোডশেডিংয়ে ভুগছেন। খালিয়াজুরী বাজারের ব্যবসায়ী সোহান বিন নবাব ও সেলিম মিয়া বলেন, ‘অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে জীবনরক্ষাকারী ওষুধসহ অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আযিম বলেন, ‘প্রায় সময়ই বিদ্যুৎ না থাকার কারণে জটিল রোগীর চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে গরমের দিনগুলোয় শিশু ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীসহ সাধারণ রোগীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।’
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির খালিয়াজুরী সাব-জোনাল অফিসের এজিএম জিল্লুর রহমান জানান, ‘খালিয়াজুরীতে বর্তমানে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৮-৯ ঘণ্টার জন্য। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রিত করা হয় মদন পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিস থেকে।’ মদন জোনাল অফিসের ডি জি এম মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতি ও গ্রিডের সীমিত সরবরাহের কারণে লোডশেডিং বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিদ্যুতের পরিমাণ অনুযায়ী খালিয়াজুরীর ফিডার চালু করতে হলে কিছু ফিডার বন্ধ রাখতে হয়। তবু প্রতি ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৮-৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে।’
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির হোসেন শামীম বলেন, ‘এই অঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। শহরাঞ্চলে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও গ্রামের মানুষ তা পাচ্ছে না। বিষয়টি জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা করা হবে।’ এভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলমান লোডশেডিং শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।