ঢাকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫

লাইসেন্স ছাড়াই চিকিৎসা বাণিজ্য

মিসবাহ উদ্দিন, বিয়ানীবাজার (সিলেট)
প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০১:৫৪ এএম
  • নবায়ন ছাড়াই বছরের পর বছর চলছে চিকিৎসা বাণিজ্য
  • অদক্ষ নার্সের হাতে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড়
  • প্রশাসনের আশ্বাস: অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান আসছে

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় লাইসেন্সবিহীন ও মানহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দৌরাত্ম্য দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। অনুমোদন ছাড়াই ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে চলছে অবাধ বাণিজ্য ও ভয়াবহ চিকিৎসা-বৈষম্য। এতে জনস্বাস্থ্য পড়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে, বাড়ছে চিকিৎসাজনিত দুর্ঘটনাও।
বিয়ানীবাজার পৌর শহর ও আশপাশের এলাকায় নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্লিনিক, ডেন্টাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, এলাকায় ৬টি হাসপাতাল ও ১২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। তবে এর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ বা নবায়নবিহীন। নবায়নের আবেদন কপি দেখিয়ে বছরের পর বছর চলছে এসব অবৈধ ব্যবসা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ক্লিনিক মালিক জানিয়েছেন, প্রশাসনের নানা জটিল শর্তের কারণে তারা সময়মতো লাইসেন্স নবায়ন করতে পারছেন না। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে অনুমোদন ছাড়াই প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন।
অবৈধ ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনার ভয়াবহতা দেখা গেছে সম্প্রতি দক্ষিণ বাজার এলাকার ‘মা ও শিশু প্রাইভেট হাসপাতাল’-এ। গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমকোনা গ্রামের সৌদিপ্রবাসী আব্দুল হামিদের স্ত্রী প্রসববেদনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে একজন অদক্ষ নার্স প্রসব করানোর চেষ্টা করেন। দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর একটি মৃত নবজাতকের জন্ম হয়। স্বজনরা অভিযোগ করেন, অভিজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই অদক্ষ নার্স দিয়ে জোর করে প্রসব করানোর কারণেই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিয়ানীবাজার থানায় এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠানে ভুয়া ‘হাতুড়ে’ ডাক্তার ও অদক্ষ নার্স দিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। মধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও অসহায় রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি তৈরি করেছে।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন বলেন, ‘অনুমোদন না নিয়ে কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানো সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা দ্রুত এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালাব। বৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সময়মতো লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে, না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিয়ানীবাজার চিকিৎসক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহিদ আহমেদ তুহিন বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। তবে মানহীন ও লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠান চালানোর সুযোগ দেওয়া যাবে না। নিয়মিত মনিটরিং ও মূল্যায়নের মাধ্যমে এই খাতকে স্বচ্ছ ও আস্থাশীল করতে হবে।’