- উপদেষ্টা ফাওজুল কবির আসার খবরে মহাসড়ক মেরামত করা হচ্ছে
- বিশ্ব রোড এলাকায় ভাঙন অংশে বিছানো হচ্ছে তিন স্তরে বালু-ইট
- ইট-বালুর স্তূপে বাড়ছে যানজট, সৃষ্টি হয়েছে জনদুর্ভোগ
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে দীর্ঘদিনের যানজট নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। সড়কের সরাইল বিশ্ব রোড এলাকায় ভাঙন অংশ সমতল করতে তিন স্তরে বালু এবং ইট বিছানো হচ্ছে। তবে সড়কের মাঝখানে ইট ও বালুর স্তূপ ফেলে রাখায় উল্টো যানজট আরও বেড়েছে, সৃষ্টি হয়েছে জনদুর্ভোগ। এ নিয়ে সড়কের চলাচলকারী যানবাহন ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে আজ (বুধবার) বিশ্ব রোড এলাকা পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। স্থানীয়রা বলছেন, উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে তড়িঘড়ি করে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। উপদেষ্টা চলে গেলে আবার ইট তুলে ফেলা হবে। তবে সওজ বলছে, এটি কোনো অস্থায়ী সংস্কার নয়, স্থায়ী সমাধানের অংশ হিসাবেই কাজটি করা হচ্ছে।
সওজের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা কার্যালয়সহ স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে দীর্ঘ যানজট নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে গত শনিবার নির্দেশ আসে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরাইল বিশ্ব রোড অংশে যানজট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এরপর ওই দিন বিকেল থেকেই সরাইল বিশ্ব রোড গোলচত্বর এলাকায় সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করে সওজ।
সেখানে বালু বিছিয়ে তিন স্তরে ইট বিছানোর কাজ চলছে। গোল চত্বর অংশে ১২ মিটার প্রস্থ ও ১৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য, আর গোল চত্বর থেকে সিলেটমুখী সরাইল কুট্টাপাড়া খেলার মাঠ পর্যন্ত ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থে তিন স্তরে ইট ও বালু বিছানো হচ্ছে। ঢাকা, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তৈরি ইট আনা হচ্ছে। এখানে মোট ৪ লাখ ইট বিছানো হবে। গত শনিবার বিকেল থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত গোল চত্বর এলাকায় ইট বিছানোর কাজ চলমান দেখা যায়।
জানা যায়, আজ বুধবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ঢাকা থেকে ট্রেনে ভৈরবে এসে সড়কপথে সরাইল বিশ্ব রোডে যাবেন। তিনি সেখানে গোল চত্বরের ভাঙন, যানজট এলাকা ও মেরামতকাজ পরিদর্শন করবেন।
সওজ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্ব রোড হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ ৮ বছর ধরে ধীরগতিতে চলছে। ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশীয় অর্থ ও ভারতীয় ঋণে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা কাজ ফেলে দেশে ফিরে যান। প্রায় তিন মাস পর তারা ফিরে এসে কাজ শুরু করেন।
তবে উপদেষ্টা আসার খবরে তড়িঘড়ি করে সড়কের মাঝখানে ইট ও বালুর স্তূপ করে রাখায় উল্টো যানজট আরও বেড়েছে। এ ছাড়া বালু যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ও বাতাসে উড়ে চলাচলের সময় ধুলোঝড়ে পরিণত হচ্ছে। ফলে মহাসড়কের আশপাশের দোকানগুলো ধুলায় ঢেকে যাচ্ছে। ছোট যানবাহনের চালক ও পথচারীদের চোখ-মুখে বালু ঢুকে যাচ্ছে। এ কারণে হাত বা রুমাল দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরে চলাচল করতে হচ্ছে।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম বলেন, ধুলাবালির কারণে সড়ক দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। উপদেষ্টা আসার খবরে তড়িঘড়ি করে সড়ক সংস্কার না করে মজবুত করে সংস্কার করা প্রয়োজন।
আজিজুর হাকিম নামের এক ট্রাকচালক বলেন, ইট ও বালুর স্তূপের কারণে গাড়ির গতি কমিয়ে চালাতে চচ্ছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রকল্পের ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ বলেন, ‘প্রকল্পের সমস্যা সমাধানে ১৬৩ কোটি টাকা নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশা করি, আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’
সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জনদুর্ভোগ লাঘবে আমরা তিন স্তরের ইট বিছানোর কাজ করছি। খুব দ্রুতই জনদুর্ভোগ লাঘব হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন