সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা নদীতে বালুখেকো সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ড্রেজার মেশিনে দিন-রাত বালু উত্তোলনের পাশাপাশি নদীতে স্থাপিত রাবার ড্যামের ওপর দিয়ে প্রতিদিন শত শত বালুবাহী নৌকা চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে রাবার ছিদ্র হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা সেচ ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে ড্রেজার ব্যবহার করে বালু তুললেও প্রশাসন তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এদিকে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর দুই পাড়ে ভাঙন ধরায় নদীপাড়ের বসতবাড়ি ও কৃষিজমি হুমকির মুখে পড়েছে। একই সঙ্গে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে। তারা জানান, আগামী অগ্রহায়ণ মাসে রাবার ড্যামে পানি সংরক্ষণ করা না গেলে পুরো এলাকার কৃষিকাজ ও সেচব্যবস্থাপনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের বৈশাখ মাসে এক বছরের জন্য খাসিয়ামারা নদী বালুমহালটি ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু ইজারাদারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অসাধু বালুখেকোরা রাবার ড্যামের ওপর দিয়েই বালুবাহী নৌকা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, রাতে বালুবোঝাই স্টিলবডি ও বারকি নৌকা চলাচলের বিনিময়ে প্রতি নৌকা থেকে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অবৈধভাবে আদায় করছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাবার ড্যামের আশপাশে অন্তত ২৬টি ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে। রাবার ড্যামের পাশ ঘেঁষে ও গোড়ার অংশে পাইপ স্থাপন করে বালু তোলা হচ্ছে। এতে রাবার ও পার্শ্ববর্তী ব্রিজের স্থায়িত্বও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ড্রেজারের শব্দে তারা অতিষ্ঠ, কিন্তু ইজারাদারদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। সম্প্রতি বাংলাবাজার এলাকায় বালু উত্তোলন নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বালুখেকো সিন্ডিকেটের সদস্যদের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পরে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে বলে জানা যায়।
আলীপুর গ্রামের কৃষক শাহীন মিয়া বলেন, খাসিয়ামারা নদীতে যেভাবে বালু লুটপাট চলছে, তাতে শুধু নদী নয়, রাবার ড্যামেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। রাবার ড্যামের রাবার যদি ছিদ্র হয়, তবে আমাদের শত শত একর জমি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়বে। বক্তারগাঁও গ্রামের আলী হোসেন বলেন, রাবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেচ ব্যবস্থায় বড় সংকট দেখা দেবে।
লিয়াকতগঞ্জ গ্রামের সোহেল রানা বলেন, বালু উত্তোলনের ফলে নদীর দুই পাড় ভাঙে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভাঙনের ফলে নদীপাড়ের বসতবাড়ি ও কৃষিজমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সালিশ ব্যক্তিত্ব নুর আলম বলেন, রাতে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্টিলবডি নৌকা রাবারের ওপর দিয়ে পারাপার হয়। এতে রাবার ছিদ্র হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন রশিদ বলেন, ইজারাদারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন। আপনারা সরেজমিন এসে দেখে যেতে পারেন।
হাওর ও নদী রক্ষা আন্দোলন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হক বলেন, সুনামগঞ্জে বালুমহালগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। তারা ইজারার বিপক্ষে নন। তবে ড্রেজার বা খননযন্ত্রে পরিবেশ বিধ্বংসী কাজের বিপক্ষে। শ্রমিকেরা যাতে হাতে বালু তুলে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ জানান, পানি শুকালে রাবার ড্যামের অবস্থা যাচাই করে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরূপ রতন সিংহ বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাবার ছিদ্র হয়েছে কি না, তা যাচাই করা হবে। রাবার ড্যামের পাশে যদি ড্রেজার চলে, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন