হারিয়ে যাওয়া একটি মোবাইল ফোনের জন্য সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন আরিফুল ইসলাম ইমন। ভেবেছিলেন, পুলিশের সহায়তায় হয়তো ফোনটি ফিরে পাবেন। কিন্তু চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার রাঙ্গাদিয়া (সিইউএফএল) পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে তিনি নতুন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হন। তার জিডির তদন্তের দায়িত্বে থাকা এএসআই সিরাজুল ইসলাম সাফ জানিয়ে দেন, ফোন উদ্ধারের চেষ্টার জন্য ‘খরচ’ লাগবে।
ভুক্তভোগী ইমনের অভিযোগ, এএসআই সিরাজুল ইসলাম তার কাছে সরাসরি ৫ হাজার টাকা দাবি করেছেন। ইমনের কথায়, পুলিশ জনগণের আস্থা ও ভরসার প্রতীক সেই জায়গা হতাশায় রূপ নেয়। ইমন বলেন, তিনি (এএসআই সিরাজ) বলেন, ‘টাকা দিলে কথা বলেন, না হয় চলে যান। সামান্য মোবাইল উদ্ধারে পুলিশ যদি এত টাকা ঘুষ চায়, আমরা কোথায় যাব?’
এদিকে ইমনের এই অভিজ্ঞতা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। আনোয়ারায় রাঙ্গাদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে উঠেছে ঘুষ বাণিজ্যের পাহাড়সম অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে যেকোনো সেবার জন্যই ‘টাকা’ যেন প্রথম শর্ত। ‘টাকা ছাড়া তিনি কথা বলেন না’ এমন অভিযোগ এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে।
আরেক ভুক্তভোগী মো. ইলিয়াছ তার বোনের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা জানান। ইলিয়াছের বোন রুবি আক্তারের বিবাহবিচ্ছেদের পর আদালত থেকে মালামাল উদ্ধারের নির্দেশনা আসে। সেই নির্দেশ পালনের দায়িত্ব পড়ে এএসআই সিরাজুল ইসলামের ওপর। ইলিয়াছের অভিযোগ, আদালতের আদেশ বাস্তবায়নেও সিরাজুল ইসলাম ধাপে ধাপে টাকা নিয়েছেন। ইলিয়াছ জানান, ‘তিনি প্রথমে ফাঁড়িতে ডেকে ৫ হাজার, পরে আরও ২ হাজার এবং মালামাল উদ্ধারের দিন আরও ৫ হাজারসহ মোট ১২ হাজার টাকা নিয়েছেন। টাকা ছাড়া তিনি কথাই বলেন না।’
অভিযোগের তালিকা এখানেই শেষ নয়। সেবা দেওয়ার নামে অর্থ আদায়ের পাশাপাশি ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বৈরাগ ইউনিয়নের খোকন নামের এক ব্যক্তি জানান, মাস দেড়েক আগে এএসআই সিরাজুল ইসলাম তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। খোকন আওয়ামী লীগ করেন এমন প্রমাণ আছে দাবি করে এএসআই সিরাজ তার পকেটে থাকা প্রায় তিন হাজার টাকা জোরপূর্বক নিয়ে নেন।
জমির বিরোধ নিষ্পত্তির নামে ‘বৈঠক’ বসিয়ে টাকা আদায়ের মতো গুরুতর অভিযোগও করেছেন মো. ইউনুচ নামের আরেক ভুক্তভোগী। ইউনুচ জানান, তাদের জমির একটি বিরোধ নিয়ে এএসআই সিরাজুল ইসলাম বৈঠক বসান এবং সালিশির নামে তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকারও বেশি অর্থ গ্রহণ করেন। টাকা দিতে না চাইলে বিষয়টি আদালতে পাঠিয়ে হয়রানি করার হুমকিও দেন তিনি।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে জানতে এএসআই সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে এত চাপাচাপি করি না। তদন্তের জন্য কিছু খরচ প্রয়োজন হয়, তাই চেয়ে নিই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমরা ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই। এত সব বিষয় দেখেন কেন?’ এমন কথা বলে বিস্তারিত বলার জন্য ফাঁড়িতে দেখা করার আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোন সংযোগ কেটে দেন ওই কর্মকর্তা।
আনোয়ারা থানার ওসি মনির হোসেনকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের হয়রানি এবং ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে আমাকে কেউ অবগত করেনি। কেউ অভিযোগ দিলে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন