বাবার সঙ্গে চায়ের দোকান দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন মো. শহিদুল শেখ (২৫)। এখন তিনি কোটিপতি ব্যবসায়ী। বিকাশ এজেন্ট, হাট ইজারাদার, কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি, ইন্টারনেট-ডিশ লাইন ব্যবসা, গরুর খামারÑ সব মিলিয়ে গড়ে তুলেছেন কয়েক কোটি টাকার সাম্রাজ্য। নির্মাণ করেছেন কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল ভবনও। অথচ ৭ বছর আগেও তিনি ছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক সাধারণ গ্রাম পুলিশ। স্থানীয়দের ভাষায়, এ যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়া।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহিদুল শেখ সদর উপজেলার সাদিপুর গ্রামের চা-বিক্রেতা শাহজাহান শেখের ছেলে। পড়াশোনা না করায় বাবার সঙ্গে কুঠিরহাট বাজারের সরকারি খাসজমিতে ছোট একটি চায়ের দোকান চালাতেন তিনি। ২০১৮ সালে শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশের চাকরি পান। তবে করোনার সময় থেকে শুরু হয় তার ভাগ্যবদল। বিকাশ ব্যবসার আড়ালে জড়িয়ে পড়েন অনলাইন ওয়ান এক্স বেট জুয়ার সঙ্গে। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন একটি শক্তিশালী অনলাইন জুয়া নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নেন বিপুল পরিমাণ অর্থ।
স্থানীয়দের দাবি, সেই টাকায় শহিদুল রাজবাড়ী জেলখানার পাশে একটি কেমিক্যাল কারখানা স্থাপন করেছেন। চালু করেছেন ইন্টারনেট ও ডিশ লাইনের ব্যবসা, গরু হাটের ইজারা নিয়েছেন, ৫০টির বেশি গরুর খামার পরিচালনা করছেন। ৩০ লাখ টাকায় কৃষিজমিও কিনেছেন তিনি। এমনকি নিজের পুরোনো চায়ের দোকান এখন ভাড়া দিয়েছেন অন্য এক ব্যবসায়ীর কাছে। এ ছাড়া সাদিপুর গ্রামে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন আলীশান ভবন। ছোট ভাই জাহিদ শেখকে দিয়েছেন ডেকোরেটরের দোকানও। তবে এখন তাকে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে তেমন দেখা যায় না। এলাকার মানুষের অভিযোগ, সময় না পাওয়ার অজুহাতে অফিসে যান না শহিদুল।
শহিদুল শেখের দাবি, তিনি চায়ের দোকান থাকা অবস্থায় বিকাশের ব্যবসা করতেন। করোনাকালীন অনলাইন জুয়ার মাঠ নয়, নিজেই অনলাইন জুয়া খেলতেন। আগে থেকেই ডিশলাইনের ব্যবসা ছিল। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবসা, কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি, গরুর হাটের ইজারা রয়েছে। ৯ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। ৫০ লাখ টাকা খরচ করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তবে এখন অনেক টাকা দেনা রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, তার স্ত্রী অনলাইনে কাঁথার ব্যবসা করেন। ২ বছর আগে আয়কর ফাইল খুলেছেন। আগে শূন্য রিটার্ন থাকলেও এখন কিছু টাকা দেখান। ব্যস্ততার কারণে গ্রাম পুলিশের ডিউটি করতে পারি না। এখন চাকরি ছাড়তে চাই। কীভাবে ছাড়ব বুঝতে পারছি না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শোকজ করেছিল, তার জবাব দিয়েছি।
স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে শহিদুলের অস্বাভাবিক সম্পদের উৎস ও অনলাইন জুয়ার নেটওয়ার্কের তদন্ত দাবি করেছেন। জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া হক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন