রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মশিউর রহমান, নলছিটি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ০২:০১ এএম

প্রায় ৪ কোটি টাকার কাঠের সেতু!

মশিউর রহমান, নলছিটি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ০২:০১ এএম

প্রায় ৪ কোটি টাকার কাঠের সেতু!

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ফয়রা বোনমাইল খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতু প্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ৩ বছর পার হলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ১০-১৫ শতাংশের মতো। ফলে প্রায় ৪ কোটি টাকায় সরকারি প্রকল্পটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে প্রতিদিন জীবনের ঝুকি নিয়ে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মিত সাঁকো ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৭ জুলাই ৩ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার ৩০৯ টাকা ব্যয়ে ফয়রা বোনমাইল খালের ওপর গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের টেন্ডার হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ২২ মে। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিক্রমের পরও নির্মাণকাজ অগ্রসর না হয়ে এখন সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়েছে। নির্মাণ শুরুর পরপরই ধীরগতিতে কাজ এগোতে থাকে। পরে প্রকল্প এলাকার শ্রমিক ও যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণাধীন অংশে লোহা ও রডে মরিচা ধরেছে। স্থবিরতার কারণে প্রকল্প এলাকাজুড়ে ঝোপঝাড়ে ঢেকে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অবস্থায় ঢালাই সম্পন্ন হলে সেতুর স্থায়িত্ব ও নির্মাণমান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণকাজের তদারকিতে গাফিলতি ছিল শুরু থেকেই। উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরিদর্শন বা অগ্রগতির কোনো রিপোর্ট তৈরি করা হয়নি। ফলে কাজের মান, গতি এবং বাজেট বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জানা যায়, নলছিটির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিল আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার মনিরুল ইসলাম (মনির হুজুর)। সরকারের পরিবর্তনের পর তিনি বিদেশে চলে যান। তার অধীনে থাকা ফয়রা বোনমাইল খালের সেতু প্রকল্পও তখন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও এখন কোনো দায়িত্ব নিচ্ছেন না।

সরেজমিন দেখা যায়, পরিত্যক্ত প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন স্থানে গোপনে একাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে সদ্যোবিদায়ি উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিদেশ থেকে নিয়মিত তদারকি ও নজরদারি চালাতেন বলে জানা যায়। এভাবে অনুমোদন ছাড়া গোপনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে এলাকার সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত চলাচল রেকর্ড করা ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপের শামিল এবং আইনত অপরাধ বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সেতুটি নির্মিত হলে ফয়রা-বোনমাইল হয়ে নলছিটি সদর ও ঝালকাঠি শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের নতুন পথ তৈরি হওয়ার কথা ছিল। এতে স্থানীয় কৃষক, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হতেন। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতা, তদারকির অভাব ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে। প্রায় ৪ কোটি টাকার সরকারি অর্থ ব্যয়ে শুরু হওয়া এই সেতু প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে।

বর্মতানে খালের দুই পাড়ে অবস্থিত ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৫ গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে সাঁকো ভেসে গেলে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে না পারা, রোগী পরিবহনে বাধা ও বাজারে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্ভোগ দেখা দেয়।

ঠিকাদার বিদেশে পলাতক থাকায় তার ম্যানেজার আলমগীর হোসেন জানান, আমি নলছিটির কাজ দেখাশোনা করিনি, সোহেল নামের একজন দেখাশোনা করত, সে-ও পলাতক! কাজ দ্রুত শুরু করা হবে বলে জানান তিনি। গোপন ক্যামেরা দিয়ে কোথা থেকে মনিটরিং করা হয়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা পিডি অফিস ও বিদেশে বসে ঠিকাদার মনিটরিং করতে পারেন, এর বেশি কিছু জানি না।

এ বিষয়ে এলজিইডি উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হাবিবুল্লাহ জানান, আমরা অফিসিয়ালি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইসলাম ব্রাদার্সকে একাধিকবার চিঠি দিয়েও উল্লেখযোগ্য সুরাহা পাইনি। গোপন ক্যামেরা লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যামেরা আমাদের এখান থেকে লাগানো হয়েছে নাকি তারা লাগিয়েছে- সে বিষয়ে আমার জানা নেই।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!