টিনের ঘরে প্রখর রোদে ঘামে ভিজে চুপসে গেছে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম। পাশের পুকুরে হেলে পড়েছে দেওয়াল, বর্ষায় টিনের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি নেমে আসে শ্রেণিকক্ষে। ভাঙা দেওয়াল বা জরাজীর্ণ টিনের চালের নিচে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে পাঠদান বিঘিœত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা রয়েছে ঝুঁকিতে।
এমন চিত্র চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার দক্ষিণ তৈলারদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে পুরোনো সেমিপাকা স্কুলটি ভেঙে নতুন স্কুল ভবন তৈরির কাজ শুরু করার পর থেকে টিনের ঘরেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। অথচ নতুন ভবনের কাজ শুরুর কিছুদিন পরই কাজ বন্ধ করে পালিয়ে যান ঠিকাদার।
ভবন নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের স্তম্ভের কয়েকটি জায়গায় পাইলিং শেষ করা হয়েছে। তবে স্তম্ভ ও বেজমেন্টের লোহাগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে। ফেলে রাখা এসব লোহায় ধরেছে জং। এ ছাড়া আর কোনো কাজ করা হয়নি। স্কুলের পাশে জায়গা না থাকায় প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে বেড়িবাঁধের পাশে টিন দিয়ে কয়েকটি রুম করে চালানো হচ্ছে স্কুলের কার্যক্রম।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের দিকে মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার শেল্টার প্রজেক্টের (এমডিএসপি) আওতায় দক্ষিণ তৈলারদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কাজ শুরু হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পাইলিংয়ের কাজ করেন, যাতে ব্যয় হয় ৯০ লাখ টাকার মতো। এরপর কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে।
তামান্না আক্তার নামের স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নড়বড়ে টিনের ঘরে বর্ষাকালে বৃষ্টি পড়ে, গ্রীষ্মে টিনের গরমে পড়তে পারি না। আমাদের আশপাশের বন্ধুরা সুন্দর সুন্দর স্কুলে পড়ে। আমরাও চাই টিনের স্কুলের পরিবর্তে নতুন একটা স্কুল হোক, যাতে আমরা ভালো করে পড়তে পারি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়নাব বেগম বলেন, ১৯৯৬ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৩ সালে এটি জাতীয়করণ করা হয়। স্কুলে বর্তমানে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী এবং ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন। এর আগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল। ২০২১ সালে স্কুল স্থানান্তরের পর থেকে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। জরাজীর্ণ টিনের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ সময় তিনি দ্রুত স্কুলের নির্মাণকাজ শুরু করার দাবি জানান।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল হোসেন বলেন, এই এলাকা ঘনজনবসতিপূর্ণ, প্রায় ৫ হাজার বাসিন্দার একটিই স্কুল। আশপাশে আর স্কুল নেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্থানীয় সমস্যার কারণে স্কুলের কাজটি সম্পন্ন হয়নি। এতে এলাকার খুদে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। বিশেষ করে ঝড়, বৃষ্টি, রোদ এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের জন্য চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি করে।
প্রকল্পটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম নামের সাবেক এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি আমরা শুরু করেছিলাম, পাইলিংয়ের কাজ করা হয়েছে, প্রায় ১ কোটির বেশি টাকা খরচ করা হয়েছে। তবে স্থানীয় এবং অফিসের কর্মকর্তার বিভিন্ন সমস্যা এবং গ্রুপিংয়ের কারণে প্রকল্পটির কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। বি-স্ট্রিম প্রকল্পের আওতায় আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করা হবে। আপাতত অস্থায়ী স্কুলটি সংস্কার করে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা হবে।

