- নিয়োগে ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
- ৯১ জন আবেদনকারীর মধ্যে ৬২ জনকে বাদ দেওয়া হয়
- লটারি না করে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে
বরগুনার আমতলী উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। আবেদনের ছয় মাস পর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ওএমএস মিলিয়ে ২৯ জন ডিলার নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, পছন্দের ২৯ ডিলার নিয়োগ দিতে গিয়ে ৬২ জনের আবেদন বাতিল করেন ওই কর্মকর্তা। এতে ক্ষুব্ধ আবেদনকারীরা নতুন করে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় একটি পত্রিকায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃক ডিলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এতে আমতলী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার জন্য ২৯টি বিক্রয়কেন্দ্রে ২৯ জন ডিলার নিয়োগের কথা বলা হয়। এর আগে থেকেই ২৪টি বিক্রয়কেন্দ্রে ডিলার নিয়োগ ছিল। কিন্তু আবেদনকালীন সময়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা ওই ২৪ কেন্দ্রের তথ্য দেন এবং পাঁচটি কেন্দ্রের বিষয়টি গোপন রাখেন।
আবেদনকারী জাকির মাতুব্বর জানান, তিনি ডিলার হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া হয়। টাকা না দেওয়ায় তার আবেদন বাতিল করা হয়। তার স্থানে অন্য এক আবেদনকারী আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পান বলে অভিযোগ করেন তিনি। জাকির মাতুব্বর আরও বলেন, ‘দেশের সব উপজেলায় লটারির মাধ্যমে ডিলার নিয়োগ হয়, কিন্তু আমতলীতে লটারি ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মামলা করেছি, কিন্তু এখনো কোনো প্রতিকার পাইনি।’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমতলী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার অধীনেই এই নিয়োগ হয়েছে। সাতটি ইউনিয়নে ২৯ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, অথচ আবেদন করেছিল ৯১ জন। প্রতিজনের কাছ থেকে দুই-তিন লাখ টাকা করে ঘুষ নেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেছিলাম, কিন্তু টাকা দিতে না পারায় আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।’
আমতলী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জালাল ফকির বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব ডিলার নিয়োগে ভয়াবহ অনিয়ম হয়েছে। বাংলাদেশের আর কোনো উপজেলায় এমন দুর্নীতি হয়নি। নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে কমপক্ষে ১০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরাও টাকা নিয়েছেন।’ এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা শারমিন জাহান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইউএনও স্যার নিয়োগ কমিটির সভাপতি। নিয়ম মেনে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।’
বরগুনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগ দিয়েছি। সাংবাদিকদের মাধ্যমেই অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরেছি। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ না হলে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকনুজ্জামান খান বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব ডিলার নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ আমার জানা নেই। বিধি অনুযায়ী যাদের আবেদন সঠিক ও যোগ্যতা সম্পন্ন ছিল, তাদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

