- অতিরিক্ত দামেও সার মিলছে না কৃষকদের
- কৃষি বিভাগ বলছে, ‘সংকট কৃত্রিম’
- ডিলারদের দাবি, ‘বরাদ্দ কম’
রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায়-রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে নন-ইউরিয়া সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও সার না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন লাখো কৃষক। ফলে মৌসুমি ফসল আবাদে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রবি মৌসুমের শুরুতেই উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা এখন জমিতে আলু, ভুট্টা ও শাক-সবজির আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিন্তু মাঠে কাজের গতি মন্থর হয়ে গেছে সারের সংকটে। টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি, এই তিন ধরনের নন-ইউরিয়া সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় জমি প্রস্তুত করতে পারছেন না কৃষকরা।
লালমনিরহাটের কর্ণপুর গ্রামের কৃষক আবদার হোসেন বলেন, ‘ডিলারদের কাছে গেলে বলে সার শেষ। কিন্তু খুচরা দোকানে গেলেই মেলেÑ তাও প্রতি কেজিতে ৮-১০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়।’ একই অভিযোগ পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া এলাকার কৃষক আবু তালেবের। তিনি বলেন, ‘নন-ইউরিয়া সার ছাড়া জমি তৈরি করা যাচ্ছে না। নভেম্বরে সারের চাহিদা আরও বাড়বে। এখনই যদি না পাই, তাহলে বড় ক্ষতি হবে।’
রংপুরের গংগাচড়ার কৃষক সুজন মিয়া বলেন, ‘অতিরিক্ত দাম দিলেও সার মেলে না। চরে ভুট্টা আবাদ নিয়ে আমরা এখন দিশাহারা।’ কাউনিয়ার কৃষক জয়নাল আবেদীন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ডিলারের কাছে নেই, খুচরায় বেশি দামে, সবকিছুই যেন উল্টো চলছে।’
বিএডিসি লালমনিরহাট গুদামের সহকারী পরিচালক একরামুল হক জানান, জেলায় ১৪৪ জন ডিলারের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত দরে সার বিক্রি হচ্ছে। সরকার টিএসপি ২৫ টাকা, ডিএপি ১৯ টাকা ও এমওপি ১৮ টাকা দরে দেয়। ডিলাররা কেজিতে ২ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করতে পারেন। তিনি বলেন, গুদামে পর্যাপ্ত সার রয়েছে, তবে বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ কম।
বিএডিসির রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, কোনো জেলাতেই প্রকৃত সংকট নেই। কিছু অসাধু ডিলার কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। বাজার মনিটরিং চলছে, দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী সারের ঘাটতি নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আশায় সংকট সৃষ্টি করছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, কৃষি বিভাগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিলাররা। লালমনিরহাটের হারাটি ইউনিয়নের সার ডিলার আবু তাহের বলেন, ‘আমরা সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি করি। কেউ বেশি দামে বিক্রি করে না। খুচরা দোকানগুলো কোথা থেকে সার পায়, সেটা আমাদের জানা নেই।’
লালমনিরহাট জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হাকিম বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলে এখন অনেক জমিতে ফসল হচ্ছে, ফলে চাহিদাও বেড়েছে। ২০০৯ সালের নীতিমালা অনুযায়ী চাহিদামতো সার সরবরাহ করলে সংকট থাকত না।’
রংপুর জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘বরাদ্দ কিছুটা কম হয়েছে, তাই সংকট তৈরি হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই তা কেটে যাবে।’
রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধভাবে সার বিক্রি রোধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক উপজেলায় অভিযান চালানো হয়েছে এবং কিছু ডিলারকে জরিমানাও করা হয়েছে। কোথাও প্রকৃত সারের সংকট নেই।’
কৃষকদের দাবি, মাঠে পর্যাপ্ত সার সরবরাহ না হলে রবি মৌসুমের ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। অন্যদিকে, কৃষি বিভাগ বলছে, বরাদ্দ যথেষ্ট এবং সংকটটি কৃত্রিম। ফলে এই বিতর্কের মাঝেই জমিতে কাজ থেমে থাকায় বিপাকে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের কৃষকেরা।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন