ঢাকা বুধবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৫

ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ১১ কোটি টাকার সেতু

বজলুর রহমান, শিবচর (মাদারীপুর)
প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৫, ০৩:১৬ এএম

*** বন্ধ সেতু নির্মাণ কাজ, ভোগান্তিতে ১২ হাজার মানুষ
*** চলতি বছরের মে মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষে হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের চান্দেরচর বাজারসংলগ্ন ১১ কোটি টাকার সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা, মামলা এবং ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর প্রশাসনিক অচলাবস্থার কারণে প্রকল্পটি থেমে গেছে। ফলে সেতুটির নির্মাণকাজ ২০২৩ সালে শুরু হলেও, কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। এতে চান্দেরচর, দ্বিতীয়াখও ও কুতুবপুর ইউনিয়নের প্রায় ১১-১২ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, সেতুটি নির্মাণ হলে শিবচরের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে জেলার অন্যান্য এলাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হতো। এতে শিক্ষা, কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় পরিবর্তন আসত। কিন্তু এখন সেতুটি তাদের উন্নয়নের প্রতীক নয়, বরং দুর্ভোগের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী চান্দেরচর হাটের পাশে এই সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চান্দেরচর হাটের ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘সেতুর কাজ অর্ধেক শেষ করে বন্ধ হয়ে গেছে। শুনেছি জমি নিয়ে মামলা আছে। কিন্তু এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা সাধারণ মানুষ। সরকারের কাছে আবেদন অধিগ্রহণের টাকা দিয়ে যেন দ্রুত কাজ শুরু করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট হোসেন শিকদার বলেন, দুই বছর ধরে আমরা সরু বাইপাস সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছি। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে, কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ায় খরচ ও সময় দুটোই বাড়ছে। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবিÑ দ্রুত এই সেতুর কাজ শেষ করা হোক।

ভূমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত মামলার বাদী চান্দেরচর এলাকার ওয়াহেদ আলী মৃধা বলেন, ‘আমাদের জমির ওপর সেতুর কাজ শুরু হলেও কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। তাই আমরা মামলা করেছি। এখন ভূমি অধিগ্রহণের কাগজ হাতে পেয়েছি। আমরা চাই সেতুটি হোক, তবে অধিগ্রহণের টাকা আগে বুঝিয়ে দেওয়া হোক।’

শিবচর উপজেলা প্রকৌশলী কে এম রেজাউল করিম বলেন, সেতুর প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় বাকি কাজ স্থগিত রয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলে দ্রুত নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করা হবে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ ইবনে মিজান বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সেতুর কাজ পুনরায় শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

চান্দেরচর, কুতুবপুর ও দ্বিতীয়াখও ইউনিয়নের মানুষ আশা করছেন, শীত মৌসুমের আগেই সেতুর কাজ পুনরায় শুরু হবে। তারা বলছেন, এই সেতুটি হলে স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার, হাসপাতালসহ প্রতিদিনের যাতায়াত অনেক সহজ হবে। আমাদের কৃষি ও ব্যবসা দুই-ই উন্নতি করবে।

১১ কোটি টাকার এই সেতুটি শুধু একটি অবকাঠামো নয়Ñ এটি শিবচরের পূর্বাঞ্চলের মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আশার প্রতীক। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপই এখন নির্ধারণ করবে, এই সেতু আশীর্বাদ হবে না দুর্ভোগের প্রতীক হয়েই থেকে যাবে।