ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৫

বর্জ্য অব্যবস্থাপনায় দূষিত পরিবেশ

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫, ০১:৪০ এএম

*** রাজশাহীর ১৪ পৌরসভা
*** কোটি কোটি টাকার প্রকল্প দেখেনি আলোর মুখ
*** বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে প্রতিবছর বরাদ্দ থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয় না
*** বিষাক্ত পরিবেশে নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে পৌরবাসীু
*** খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বর্জ্য সংগ্রহে কোটি টাকার সরঞ্জাম

রাজশাহী জেলার পৌরসভা এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশ দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দিরা। অথচ তাদের ঠিকই পৌরকর পরিশোধ করতে হয়। জেলার ১৪টি পৌরসভার মধ্যে ১৩টিতেই সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় বাসিন্দরা যেখানে সেখানে ময়লা-আর্বজনা ফেলে দূষিত করছে পরিবেশ। এতে বিষাক্ত পরিবেশে নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে পৌরবাসী। অথচ পৌরসভার বাসিন্দাদের উন্নয়নে সরকারিভাবে কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ থাকলেও সেগুলো আলোর মুখ দেখছে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে প্রতিবছর বরাদ্দ থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয় না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী জেলায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কাটাখালী, তাহেরপুর, বাঘা ও গোদাগাড়ী পৌরসভায় প্রায় ৬ কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প চলমান। অবকাঠামো নির্মাণের জমি না থাকাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় দীর্ঘদিনেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বর্জ্য সংগ্রহে কোটি টাকায় কেনা ডাস্টবিন, ভ্যান, ভ্যাকুটাগসহ বিভিন্ন পরিবহন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এগুলো কাগজে কলমে থাকলেও, নানা কারণে দীর্ঘ সময়েও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বর্জ্য সংগ্রহ ও নির্ধারিত স্থানে ফেলার জন্য পৌরসভাগুলো কোটি টাকায় যানবাহন কিনেছেন। কিন্তু প্রায় সব পৌরসভায় যানবাহনগুলো ব্যবহার হয় না। ফলে এই  যানবাহনগুলোও নষ্ট হতে চলেছে। কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বছরে কমপক্ষে দুই কোটি টাকা ব্যয় করে। এরপরও কোনো পৌরসভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন নেই।

সরেজমিন দেখা গেছে- রাজশাহী নওহাটা পৌরসভায় ভাগাড় কিংবা ডাম্পিং স্টেশন নেই। এখানকার ময়লা, আবর্জনা ফেলা হয় বারনই নদীতে। শুধু তাই নয়- এ নদীতেই ফেলা হয় বাগমারার তাহেরপুর পৌরসভার বর্জ্য। দুর্গাপুর পৌরসভা বর্জ্য ফেলা হয় হোজা নদীতে। আর গোদাগাড়ী পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হয় পদ্মার বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া কাটাখালী পৌরসভার কঠিন বর্জ্য ফেলা হয় সিটি হাটের ভাগাড়ে। তবে বেশিরভাগ ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় কাটাখালী বাজারের ড্রেনে। ফলে বৃষ্টি হলে বড় ড্রেনটি সংকুচিত হয়ে পানি জমে থাকে। আর বাঘা পৌরসভার নির্ধারিত জায়গা থাকলেও বর্জ্য ফেলা হয় শাহী মসজিদের পুকুরে।

এ প্রসঙ্গে বাঘা পৌরসভার বাসিন্দারা জানান, এখানকার বর্জ্য পুুকুরে ফেলার কারণে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। সেই পুকুরে গোসল করলে চর্মরোগ ও ডায়রিয়া রোগ হচ্ছে। কখনো কখনো খোলা আকাশের নিচে বর্জ্যগুলো ফেলা হয় ড্রেনে। এরফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতার জমে থাকা পানিতে মশা বংশ বিস্তার করে। সেই মশা-মাছি থেকে ছড়াচ্ছে রোগ-ব্যাধি। এবার রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

নওহাটা পৌরসভার বাসিন্দা সবুজ ইসলাম বলেন, নওহাটা পৌরসভার বর্জ্য বারনই নদীতে ফেলা হয়। এই নদীর পানি প্রবাহমান নয়। ফলে বর্জ্যগুলো দীর্ঘদিন পানিতে থেকে পচে নদীর পানি দূষিত করে। সেখান থেকে ছড়ায় দুর্গন্ধ। এই নদীর পানি পার্শ্ববর্তী বাগমারা উপজেলায় গিয়ে সেই বর্জ্য পচে সেখানেও দুর্গন্ধ ও রোগ জিবাণু ছড়াচ্ছে। অথচ পৌর সভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ থাকলেও সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, বর্জ্য অপসারণ ও ডাম্পিং ব্যবস্থাপনা প্রতিটি পৌরসভার অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। অথচ রাজশাহীর ১৪টি পৌরসভার ১৩টিতে নেই ভাগাড় ও সেকেন্ডারি স্টেশন। শুধুমাত্র চারঘাটে একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রয়েছে। কিন্তু পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই জেলার কোন পৌরসভায়।

 বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জানান, দূষিত বর্জ্যে চর্মরোগ ছাড়াও ডায়রিয়া রোগ হতে পারে। বর্জ্যরে কারণে সৃষ্ট বায়ুদূষণে হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সার ও কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির হোসেন বলেন, খোলা আকাশের নিচে ও নদীনালা খালবিল ও পুকুরে বর্জ্য বিভিন্ন ধরনের দূষণ তৈরি করছে। এরফলে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া পরিবেশ গত সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব ফেলছে। পরিবেশ দূষণরোধে এ ব্যবহারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

এ বিষয়ে কাটাখালী পৌরসভার প্রশাসক জাহিদ হাসান বলেন, মানবসৃষ্ট বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের যে বিষয়টা সেটার জন্য আমরা এখনো কোনো জায়গা পাইনি। সুনির্দষ্ট ভালো জায়গা দেখা হচ্ছে। জায়গা পেলে দ্রুত সেখানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে রাজশাহী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ বলেন- পচনশীল দ্রব্যগুলোর মধ্যে বিষাক্ত গ্যাস ও নানান রকম ব্যাকটেরিয়া অসুখের প্রধান উৎস। আগামিতে আমাদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তাই বর্জ্য ব্যবস্থায় আমাদের সচেতন হতে হবে।