ঢাকা শনিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৫

রাতের আঁধারে নদের মাটি লুট

মাদারীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ০৫:৪২ এএম
  • অন্তত ২০টি স্থান থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছেন প্রভাবশালীরা
  • মাটি কেটে ট্রলারে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হয়
  • ঝুঁকিতে রয়েছে বাড়িঘর ও ফসলি জমি

মাদারীপুর সদর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পাড়ের অন্তত ২০টি স্থান থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ট্রলারে করে এসব মাটি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন স্থানে, যা বিক্রি হচ্ছে মূলত ইটভাটায়। এতে নদের পাড়ের গ্রামগুলো ভাঙনের আশঙ্কায় পড়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদের পাড় থেকে স্থানীয় ইলিয়াস চৌকিদার তার লোকজন নিয়ে ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত মাটি কেটে ট্রলারে করে নৌপথে পরিবহন করছেন। প্রথমে নিজ জমি থেকে মাটি কাটা শুরু করলেও পরে প্রতিবেশী খলিল চৌকিদার ও বাবুল চৌকিদারের জমি থেকেও মাটি তোলা হয়। তারা নিষেধ করলেও ইলিয়াস তা শোনেননি।

এই মাটি কাটার কারণে নদের পাড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কাদের সরদারের সবজিখেত ও মিন্টু সরদারের বসতবাড়ি এখন নদভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর ও কাতলা বাহেরচরের চারটি স্থানসহ কুমার নদের তীরবর্তী রাজারচর, পখিরা, তিন নদীর মুখ, চর কালকিনি, চর হোগলপাতিয়া ও চর ব্রাহ্মন্দী এলাকায়ও একইভাবে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।

উত্তর মহিষেরচর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আলমগীর শিকদার বলেন, ‘রাতে স্থানীয় ইলিয়াস চৌকিদার আড়িয়াল খাঁ নদের পাড় থেকে মাটি কেটে নিয়ে যান। আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে চোখ তুলে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন।’

গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান সাইফ বলেন, ‘আমরা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েছি, কিন্তু কিছুই হয়নি। প্রতিদিন রাতেই ট্রলারে করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী চক্র। এভাবে চলতে থাকলে পুরো গ্রাম ভাঙনের মুখে পড়বে।’

স্থানীয় মিন্টু সরদার বলেন, ‘প্রতিদিন মাটি লুট হচ্ছে। আমাদের ফসলি জমি আর ঘরবাড়ি সব নদে বিলীন হয়ে যাবে।’ বাবুল চৌকিদার জানান, তার তিন কড়া জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে গেছে ইলিয়াস চৌকিদার। একই অভিযোগ করেছেন খলিল চৌকিদারও। তাদের মতে, মাটি কেটে নেওয়ায় নদের পাড়ের ফসলি জমি এখন ঝুঁকির মধ্যে।

মাদারীপুরের আইনজীবী আবুল হাসান সোহেল বলেন, ‘নদের তীর থেকে মাটি কাটা মানে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা। এতে নদীর ভারসাম্য নষ্ট হয়, ভাঙন বাড়ে। চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে চরাঞ্চলগুলো এক সময় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।’

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘নদের তীরবর্তী এলাকায় নিয়মিত টহল ও মনিটরিং চালু করা জরুরি। পাশাপাশি জনসচেতনতা ও আইন প্রয়োগ বাড়াতে হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে ইলিয়াস চৌকিদার বলেন, ‘আগে মাটি কেটেছি, কিন্তু এখন আর কাটি না। মাটি কাটলে অন্যের ক্ষতি হয় বুঝতে পেরে বন্ধ করেছি।’

এ বিষয়ে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক আফসানা বিলকিস বলেন, ‘নদের তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধে একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’