ঢাকা শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

নিম্নমানের ইট দিয়ে সড়ক সংস্কার

শেখ সেকেন্দার আলী, পাইকগাছা
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০২:২৭ এএম

খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার শিববাটি ব্রিজের নিচ থেকে আলোকদী আবাসন প্রকল্প হয়ে কাজীর বিল গেট পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে নি¤œমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এ কাজে ব্যবহৃত নি¤œমানের ইট ও অপর্যাপ্ত বালি নিয়ে শুরু থেকেই এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছেÑ মানহীন উপকরণ ব্যবহার, যথাযথ তদারকির অভাব এবং কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নীরবতা পুরো প্রকল্পটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পৌর সদরের উপকূলীয় শহর জলবায়ু সহিষ্ণু প্রকল্পের (ই-জিপি/সিটি সিআরপি/পিএআইকে/আরডি-০১) আওতায় সড়কটির নির্মাণকাজ চলছে। এ কাজের তদারকি করছে পাইকগাছা পৌরসভা। প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়কটির প্রস্থ ৩ মিটার ১০ ইঞ্চি। প্রকল্পটির চুক্তিমূল্য ২ কোটি ২৮ লাখ ৭ হাজার ৫৩ টাকা ১৯ পয়সা। ‘ওডি এন্টারপ্রাইজ’ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করেছে, যা ২০২৬ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কটির কাজে ভাঙা ও আধপোড়া এবং অন্য সড়ক থেকে তুলে আনা নি¤œমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। বালির পরিমাণও প্রকল্পের নির্দেশিত অনুপাতে দেওয়া হচ্ছে না। সড়কের বেশির ভাগ জায়গায় বালির স্তর পাতলা, ফলে কিছুদিন গেলেই এই রাস্তা দেবে যাবে।

এদিকে সড়কের পাস দিয়ে বয়ে গেছে শিবসা নদী। নদীতে জোয়ারের পানির চাপ হলে সড়ক ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি এমনভাবে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করে এবং সড়ক নিচু করে করা হয় তবে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙে পৌর সদরে পানি প্রবেশ করবে। এলাকাবাসী আশঙ্কা, এইভাবে নির্মাণকাজ চলতে থাকলে বর্ষার আগেই পুরো সড়ক ভেঙে পড়বে। এতে জনগণের ভোগান্তির পাশাপাশি কয়েক কোটি টাকার সরকারি অর্থ নষ্ট হবে।

স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ। কেউ কেউ বলছেন, কর্তৃপক্ষ যদি শুরু থেকেই নজরদারি করত, তবে এত নি¤œমানের কাজ হতো না। 

জানা যায়, পৌরসভার এই সড়কটি স্থানীয়দের চলাচলের অন্যতম একটি সড়ক। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করেন। কিন্তু মানহীন কাজের কারণে সড়কটি দ্রুত নষ্ট হয়ে গেলে আবারও বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ ব্যয়ে পুনর্নির্মাণ করতে হবে, যা জনগণের করের টাকার অপচয় ছাড়া কিছু নয়। এ কারণে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অবিলম্বে নি¤œমানের কাজ বন্ধ ও একটি স্বাধীন তদন্ত টিম গঠনের দাবি জানিয়েছেন। 

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ওডি এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নি¤œমানের ইট ও খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি দাবি করেন, সড়কের ওপরের ফিনিশিংয়ের জন্য মাত্র ৫-১০ মিলি পরিমাণ নি¤œমানের ইট ও খোয়া দেওয়া হচ্ছে। সড়কে ব্যবহৃত ইটগুলো সরকারের কাছ থেকে ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ক্রয় করা হয়েছে। পুরোনো সলিং ইটের খোয়া করে নতুন করে বসানো হচ্ছে।

বালির বিষয়ে তিনি বলেন, বালির পরিমাণ নির্ধারিত ৮ ইঞ্চি। এর পরিবর্তে আমরা ১৬ ইঞ্চি দিচ্ছি। সড়কের লেভেলের চেয়েও এক ফুট উঁচু করা হয়েছে। পিচের টেকসই নিশ্চিত করতে ইট গুঁড়া ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ বালি দিলে তা বাতাসে উড়ে যায়।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ম্যানেজ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে প্রকল্পের প্রকৌশলী সুমন দাশ বলেন, সরেজমিনে গিয়ে দেখে বলতে পারব, সেখানে আসলে কী সমস্যা? সড়কের পুরোনো সলিং ইট খোয়া করে নতুন করে বসানো হচ্ছে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি তেমন কিছু দেখা যায়, তাহলে তা উঠিয়ে দিয়ে নতুনভাবে খোয়া বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মাহেরা নাজনীন বলেন, যেহেতু আমারা লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।