- সিভিল সার্জন অফিসের নিয়মিত তদারকির অভাব
- অধিকাংশ চিকিৎসকই সরকারি নির্দেশনা মানছেন না
- ভুয়া ডাক্তারদের চিকিৎসা নেওয়ায় রোগীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন
যশোর জেলায় ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য। ডিগ্রিবিহীন এসব প্রতারক চিকিৎসক পরিচয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষের জীবন নিয়ে খেলছেন। উপজেলা প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও সিভিল সার্জন অফিসের নিষ্ক্রিয়তা ও কার্যকর তদারকির অভাবে ভুয়া চিকিৎসকরা দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করে চলেছেন।
আব্দুল আলিম (৫০) ডিগ্রিধারী চিকিৎসক নন। অথচ মাসের পর মাস যশোর শহর ও চৌগাছা উপজেলা শহরে ডাক্তার পরিচয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিলেন। গত ২২ অক্টোবর আদর্শ মেডিকেল হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে তার প্রতারণা ফাঁস হয়।
চৌগাছা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসমিন জাহান অভিযানটি পরিচালনা করেন। এ সময় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদিত নিবন্ধনপত্র দেখাতে না পারায় ভুয়া চিকিৎসক আব্দুল আলিমকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা। তিনি যশোর শহরের শংকরপুরের মৃত আবু বক্কারের ছেলে।
এর আগে গত ২৩ জুলাই চৌগাছার রায়হান হোমিও হলে অভিযান চালিয়ে জহির রায়হান (৩৭) নামে আরেক ভুয়া চিকিৎসককে এক হাজার টাকা ও ১৫ দিনের কারাদ- প্রদান করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আব্দুল আলিম ও জহির রায়হানের মতো আরও অনেক ভুয়া ডাক্তারের রাজত্ব চলছে যশোরে। তাদের খপ্পরে পড়ে মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। রোগীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভুগছেন।
আসল চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্র, সাইনবোর্ড ও ভিজিটিং কার্ডে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসির) নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ না করায় ভুয়ারা বহাল তরিয়তে কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। ভুয়া চিকিৎসকদের দমনে উপজেলা প্রশাসন মাঝে-মধ্যে অভিযান চালালেও অজ্ঞাত কারণে সিভিল সার্জন অফিস নীরব রয়েছেন।
জানা গেছে, ভুয়া ডিগ্রিধারীদের শনাক্ত করতে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র, ভিজিটিং কার্ড, নামফলক ও সাইনবোর্ডে তাদের নিবন্ধন নম্বর উল্লেখের পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসির)। এ ব্যাপারে ২০১৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিএমডিসি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্দেশনাও জারি করেন। কিন্তু যশোরের চিকিৎসকরা এ নির্দেশনা মানছেন না।
যশোর জেলার অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দায়িত্বরত পালন করা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র, ভিজিটিং কার্ড ও সাইনবোর্ডে বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ নেই। ফলে আসল নকল চিকিৎসকদের চেনার কোনো উপায় থাকছে না। এ সুযোগে ভুয়া ডিগ্রিধারীরা চিকিৎসাসেবার নামে প্রতারণা করে চলেছেন। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে হাজার হাজার টাকা লুফে নিচ্ছেন। অথচ সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানান, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে সাইনবোর্ড ও ভিজিটিং কার্ডে বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করার ব্যাপারে সরকারিভাবে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসক নির্দেশনা মানছেন না এটা তিনিও অবগত। বিএমডিসি থেকে নির্দেশনা আসলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিভিল সার্জন আরও জানান, এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রীধারী বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশনকৃতরা ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবেন না। ভুয়া ডাক্তার দমনে স্বাস্থ্য বিভাগ সর্বদা সোচ্চার।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন