প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাইয়ে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা এই এলাকার জামাই-মেয়ে, ইষ্টি-কুটুমরা আসেন এখানকার স্বজনদের বাড়ি বাড়ি। মেলা থেকে সেরা মাছ কিনে জামাইরা নিয়ে যান শ্বশুরবাড়িতে। তাই এ মেলাকে গ্রামীণ জামাই মেলা নামেও বলা হয়ে থাকে।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় এখনই শীতের আমেজ। ঘন কুয়াশায় খানিক দূরের দৃশ্য ঝাপসা। এর মধ্যেই কালাই-মোকামতলা মহাসড়কের পাশে কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারে বসেছে মাছের মেলা। সেখানে সুন্দর করে সাজানো কাতলা, রুই, মৃগেল, চিতল, গ্রাসকার্প, কার্ফু, কালবাউশ, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের মাছ। সেখানে ভোর থেকে বছেসে সারি সারি মাছের দোকান। চলছে হাঁকডাক ও দরদাম। দুই কেজি থেকে শুরু করে ২৫ কেজি ওজনের বড় মাছ। মাছের আকার অনুযায়ী প্রতি কেজি মাছ ৩শ থেকে ১২শ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারাও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনছেন ওইসব মাছ। আবার দেখতে এসেছেন অনেকেই। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষ এ মেলায় অংশ নেন এ ছাড়াও উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর, আহম্মোবাদ ইউনিয়ন ও কালাই পৌরসভার শতাধিক গ্রাম-মহল্লার মানুষেরা।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে মেলা বসে। নতুন ধান কাটার উৎসবে কৃষকদের প্রস্ততকৃত চালে প্রথম রান্না উপলক্ষে এ নবান্ন উৎসব পালিত হয়। এদিনে মেয়ে-জামাই ও আত্মীয়-স্বজনকে আমন্ত্রণ করেন কৃষকরা। যথারীতি অনুষ্ঠান পালন করতে জামাই-মেয়ে, বিয়াই-বিয়ান ও আত্মীয়-স্বজনরা আসেন বাড়িতে। পাড়া-মহল্লায় জেগে ওঠে উৎসবের আমেজ। পিঠা-পুলি, পায়েস, গুড় ও চিনির ক্ষীর সঙ্গে খই ও মুড়ি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।
মেলায় ঘুরতে সোনিয়া আক্তার জানান, প্রতিবছর নবান্ন উৎসব উপলক্ষে এই মেলার আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে এসে দরকষাকষি করেন। ভালো লাগলে মাছ কিনেন।
মেলায় মাছ কিনতে আসা রশিদুল আলম নামে এক ব্যক্তি জানান, অন্য বছরের চাইতে এবার মাছের দাম একটু বেশি। তবে যাই হোক না কেন এ মেলা থেকে জামাইয়েরা শাশুড়ির জন্য মাছ কিনে নিয়ে যায়।
সেখানে আরেক জন মাছ বিক্রেতা সাইম বলেন, আমি প্রতিবছরই এ মেলায় মাছ বিক্রির জন্য আসি। বর্তমান সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি, তবে মাছের বাজারে তুলনায় মাছের দাম বেশি হলেও সবাই আনন্দের সঙ্গে মাছ কিনছেন। এবার মাছ নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে না। প্রত্যেক বিক্রেতা অন্তত ৮-১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেন এবং লাভ ভালোই হয়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, নবান্ন উপলক্ষে কালাই পাচশিরা বাজারে মৎস্য মেলার আয়োজন করা হয়। এ ধরনের আয়োজন ঐতিহ্যকে ধারণ করে। আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটি মেলা আয়োজন করায়।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন