ঢাকা রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫

মাছ শিকারে গিয়ে সন্ধান নেই ১৩ জেলের

লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৫, ০৩:৪৫ এএম

ভোলার লালমোহন উপজেলা থেকে সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন ১৩ জেলে। উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফারুক মাঝির মা-বাবার দোয়া নামে একটি ট্রলিংবোর্টে করে ওই সব জেলে ১২ দিন আগে সাগরের উদ্দেশে রওনা দেন। যাত্রার ছয় দিনের মধ্যে তাদের আবার তীরে ফেরার কথা থাকলেও ১২ দিন অতিবাহিত হলেও তাদের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা। এতে করে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে ওই সব জেলে পরিবারে।

জানা গেছে, গত ১০ নভেম্বর দুপুরে লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দলিল মাস্টার বাজার এলাকা ও বাতিরখাল মৎস্যঘাট এলাকা থেকে মাছ শিকারের উদ্দেশে একটি ট্রলিংবোটে করে রওনা দেন ১৩ জেলে। ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফারুক মাঝির মা-বাবার দোয়া নামের ওই ট্রলিংবোর্টে করে ১১ নভেম্বর চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ মৎস্যঘাটে পৌঁছে সেখান থেকে বোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে সাগরের উদ্দেশে রওনা দেন ওই সব জেলে। যাত্রার ছয় দিনের মধ্যে তাদের আবার তীরে ফেরার কথা থাকলেও ১২ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। কোনোভাবে ওই সব জেলের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছেন না স্বজনেরা। এতে করে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে ওই সব জেলে পরিবারে।

নিখোঁজ জেলেরা হলেনÑ লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দলিল মাস্টার বাজার এলাকার মো. মাকসুদুর রহমান, মো. খোকন, মো. হেলাল, মো. শামিম, মো. সাব্বির, মো. সজীব, মো. জাহাঙ্গীর, মো. নাছির মাঝি এবং একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাতিরখাল এলাকার আব্দুল মালেক, মো. ফারুক, মো. মাকসুদ, মো. আলম মাঝি, মো. ফারুকসহ মোট ১৩ জেলে।

ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দলিল মাস্টার বাজার এলাকার নিখোঁজ জেলে মো. খোকনের স্ত্রী মোসা. রিপা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী নদী-সাগরে মাছ শিকার করে টাকা উপার্জন করতেন। তা দিয়ে দুই সন্তান এবং আমার শ^শুর-শাশুড়িকে নিয়ে সুন্দরভাবে সংসার চালাতেন তিনি। কিন্তু সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে এখন আমার স্বামীর কোনো খোঁজ নেই। তিনি একা নন, তার সঙ্গে ছিল আরও ১২ জন। তাদের কারোরই কোনো খোঁজ নেই। তাদের সঙ্গে কী হয়েছে তা-ও জানি না। এখন কেবল দোয়া করি সবাই যেন নিরাপদে থাকেন এবং আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।’

নিখোঁজ আরেক জেলে হেলালের স্ত্রী মিতু বেগম বলেন, ‘স্বামী বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলেছিলেন আমি যেন নিজের এবং সন্তানের খেয়াল রাখি। তাকে বলেছিলাম, আমি বাবার বাড়ি যাব। তিনি বলেছেন, সাগর থেকে ফিরে তিনিসহ একসঙ্গে যাবেন। এখন তারই কোনো খোঁজ নেই। তাকে ছাড়া সন্তানসহ আমার এবং বৃদ্ধ শ^শুর-শাশুড়ির কী হবে? কীভাবে চলব আমরা? আমার স্বামীকে ফিরে পেতে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’

মাকসুদুর রহমান নামে নিখোঁজ আরেক জেলের ছেলে মো. নয়ন বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যাওয়ার পর সর্বোচ্চ ছয় দিনের মধ্যে সবার ফেরার কথা। তবে এখন ১২ দিন হয়ে গেছে, এখনো কেউ ফেরেনি। তাদের খুঁজতে শনিবার একটি ট্রলারে করে সাগরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন আত্মীয়স্বজন। আমার বাবাসহ বাকি জেলেদের সন্ধান না পাওয়ার বিষয়টি এরই মধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও থানার পুলিশকে জানানো হয়েছে। তবে তারা এখন কী অবস্থায় রয়েছেন বা তাদের সঙ্গে কী ঘটেছে, তা আমাদের কারোরই জানা নেই। তাই আমরা চাই প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতায় আমার বাবাসহ অন্যান্য জেলে শিগগিরই ফিরে আসবেন।’

এ বিষয়ে লালমোহন থানার ওসি (তদন্ত) মো. মাসুদ হাওলাদার বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ কোনো অভিযোগ বা জিডি করেননি। তবু আমরা বিষয়টি জানার চেষ্টা করব।

লালমোহন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলী আহমদ আখন্দ বলেন, ‘জেলেদের নিখোঁজের সংবাদ আমরা পেয়েছি। তবে কতজন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন, তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে ওই সব জেলের অবস্থান জানার চেষ্টা করছি।’