নওগাঁর মান্দা উপজেলায় নারী উন্নয়ন ফোরামের নামে বরাদ্দকৃত ১০ লাখ টাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়াই আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। কাগজপত্রে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন দেখানো হলেও ফোরামের সদস্যরা জানেন না বরাদ্দের কথা, কেউ কোনো উপকরণও পাননি। ফলে উপজেলাজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একের পর এক ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বেড়েই চলেছে। দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরকারি বার্ষিক উন্নয়ন তহবিলের (এডিবি) আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নারী উন্নয়ন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রকল্পে মোট ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়। এর মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণের নামে ৫ লাখ টাকা এবং গবাদি পশু বিতরণের নামে আরও ৫ লাখ টাকা।
প্রকল্প দুটি উপজেলা এলজিইডির তালিকায় যথাক্রমে ১৪৮ ও ১৪৯ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত এবং কাগজপত্র অনুযায়ী ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে উপজেলা পরিষদের সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তবে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারী উন্নয়ন ফোরামের ৪২ জন সদস্যের কেউই এ দুই প্রকল্প থেকে কোনো উপকরণ পাননি। বরাদ্দের ব্যাপারেও ছিল না তাদের কোনো ধারণা। গত অর্থবছরের বরাদ্দকৃত সেলাই মেশিন ও গবাদি পশু না পেয়ে (২৪ নভেম্বর ২০২৫) নারী উন্নয়ন ফোরামের সদস্যরা বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আখতার জাহান সাথীর কার্যালয়ে মৌখিক অভিযোগ করে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। ইউএনওর সাথে সাক্ষাত শেষ করে নুরুল্যাবাদ ইউপির নারী সদস্য প্রীতি রাণী বলেন, ইউএনও স্যার বলেছেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে নারী উন্নয়ন ফোরামের কোনো অস্তিত্ব নেই, তাহলে বরাদ্দ আসবে কোথায় থেকে?
নারী উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও পরানপুর ইউপির সদস্য কমলা বেগম বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরে নারী উন্নয়ন ফোরামের মাধ্যমে কিছুই দেওয়া হয়নি। বরাদ্দ ছিল কি না, সেটাও আমাদের জানানো হয়নি।’
কসব ইউপির নারী সদস্য আঞ্জুয়ারা ও সানোয়ারা বেগম বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে নারী ফোরামের সভাপতি না থাকায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কোনো বরাদ্দ বা বিতরণ সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।
নুরুল্যাবাদ ইউপির নারী সদস্য আম্বিয়া আক্তার বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের আগে বরাদ্দ আসতে পারে এমন কথা শুনেছিলাম। কিন্তু কাউকে কিছু দেওয়া হয়নি। কে বরাদ্দ নিয়ে সুবিধা নিয়েছে, তা আমাদের জানানো হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আবু সায়েদ জানান, ‘আমি যোগদানের আগেই কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে। সেলাই মেশিন ও গবাদি পশু বিতরণ হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আখতার জাহান সাথী বলেন, ‘প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকলে কাজ বাস্তবায়নের কথা। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

