- ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ছাড়িয়েছে ২ লাখ ১ হাজার টাকা
- দাম বাড়ায় কমেছে বেচাকেনা, বাড়ছে ব্যবসায়ীদের লোকসান
- কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়ছেন বহু কারিগর
গত এক বছরে দফায় দফায় স্বর্ণের দাম বাড়ায় দুপচাঁচিয়া উপজেলার জুয়েলার্স ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম সংকটে। উপজেলায় আনুমানিক ৮৩টি জুয়েলার্স দোকান থাকলেও ক্রেতা সংকটে এখন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে বেচাকেনা। এতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন এ পেশার সঙ্গে যুক্ত প্রায় দুই শতাধিক কারিগর। অনেক কারিগর কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন।
গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সরেজমিনে কথা হয় মাতৃ জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী অজিত দত্ত পতু, ভাই ভাই জুয়েলার্সের বিকাশ চন্দ্র অধিকারী, রুপম জুয়েলার্সের রিঙ্কু কুন্ডু ও স্বর্ণ কুটির জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী কৃষ্ণ দাসের সঙ্গে। তারা জানান, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ। বর্তমানে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০ টাকা, ২১ ক্যারেট প্রতি ভরি ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯৬ টাকা এবং ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম প্রতি ভরি ২ লাখ ১ হাজার ৭৭৬ টাকা। এ ছাড়া সনাতনী পদ্ধতিতে গলানো ও পাকা করা স্বর্ণের দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৮০ টাকা। রুপার বাজার দর প্রতি ভরি ৪২ হাজার টাকা।
এভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো ক্রেতা আর দোকানে আসছেন না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ স্বর্ণ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির দুপচাঁচিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি ও আরবি জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী জাহেদুল হক তালুকদার কাজল বলেন, স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণে জুয়েলার্স দোকানে বেচাকেনা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। পাশাপাশি কারিগরদের কাজও কমে গেছে। নতুন নতুন দোকান হলেও ব্যবসা না থাকায় পুরো উপজেলায় স্বর্ণের ব্যবসা প্রায় থমকে গেছে।
তিনি আরও জানান, যারা বহুদিন ধরে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত, তারা অন্য ব্যবসার পাশাপাশি কোনোমতে এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখছেন। তবে মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীরা আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন। একটি ছোট আকারের জুয়েলার্স দোকান চালু করতে এখন দোকানের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্স, ইনকাম ট্যাক্স এবং এসিড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদনসহ নানা প্রক্রিয়ায় বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, অনেক সময় ক্রেতারা গহনার অর্ডার দিয়ে কিছু অগ্রিম টাকা জমা দেন। পরে বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে গেলে মহাজনের কাছ থেকে স্বর্ণ কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হয়। এতে গহনা তৈরি শেষে ডেলিভারি দিতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচের কথা জানালে ক্রেতারা অনীহা প্রকাশ করেন, ফলে ব্যবসায়ীদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়।
কারিগররা ন্যায্য মজুরি না পেলে অন্য পেশায় চলে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, কারিগরই এই শিল্পের মূল চালিকাশক্তি, অথচ তারাই এখন সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

