ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

তিন জেলায় ৩৮ জনকে বিএসএফের পুশইন।

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৫, ১২:৫৮ এএম

ভিন্ন ভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন বন্ধই হচ্ছে না। নেত্রকোনার দুর্গাপুর, জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও লালমনিহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্ত দিয়ে মোট ৩৮ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে তাদের পুশইন করেছে বলে জানা যায়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ
নেত্রকোনা:  নেত্রকোনার বিজয়পুর সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল সকালে পুশইন করার পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা তাদের আটক করেন। আটককৃতদের মধ্যে ১৯ জন হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ) ও ২ জন পুরুষ রয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৯ জুন থেকে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা দিল্লির বিভিন্ন এলাকা থেকে পুশইন করতে তাদের একত্রিত করেন। এরপর গতকাল দিল্লির নাজিরাবাদ বিমানবন্দর থেকে বিমানে করে আসাম বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে বিজয়পুর সীমান্ত দিয়ে এদের পুশইন করা হয়। বিজিবি খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
আটককৃতরা হলেনÑ হৃদয়, মোহন, আল আমিন, ঝিনুক, হান্নান, রুহুল আমিন, ছোঁয়া মজুমদার, ফারিয়া, সঞ্জনা, মো. অন্তর, নেহা, লিটন, আরোহী, মুনমুন, রিয়া, মনি, আলম, ফয়সাল, পূজা, রূপসী ও কাউসার।
বিজিবির নেত্রকোনার অধিনায়ক এ এস এম কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, আটককৃতদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দুর্গাপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর জিডি করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তারা নিজ নিজ এলাকায় যেতে পারবে।
লালমনিরহাট: জেলার আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্ত দিয়ে আবারও ১০ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। গতকাল ভোরে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সীমান্ত মেইন পিলার ৯২৫নং সীমান্ত পিলার এলাকা দিয়ে বিএসএফ সদস্যরা তাদের বাংলাদেশে পুশইন করে। পরে সীমান্ত মেইন পিলার ৯২৫ থেকে আনুমানিক ১ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বানিয়াটারি নামক স্থান থেকে বিজিবির সদস্যরা ১০ জনকে আটক করে। তাদের মধ্যে ৩ জন পুরুষ, ৩ জন নারী ও ৪ জন শিশু রয়েছে। বিজিবি জানায়, আটককৃতরা প্রায় ১৫ বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছিল। ভারতীয় পুলিশ তাদের আটক করে বিএসএফের হাতে হস্তান্তর করে। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায়।
এ বিষয়ে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম জানান, পুশইনকৃতরা নিজেদের বাংলাদেশি দাবি করেছেন। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য যাচাই-বাছাই চলছে। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সত্যতা পেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পুশইনের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।
জামালপুর: জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর সীমান্ত দিয়ে ৭ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। গতকাল ভোরে ধানুয়া কামালপুর সীমান্তের ১০৮৩ নাম্বার পিলারের কাছ দিয়ে তাদের পুশইন করার পর স্থানীয়দের হাতে আটক হয়। পরে তাদের বকশীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে ৪ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ।
স্থানীয়রা জানায়, ধানুয়া কামালপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ৭ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফÑ এমন খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল ভোরে গ্রামবাসী সীমান্তে অবস্থান নেয় এবং সন্দেহভাজন ৭ জনকে আটক করে। তারা আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা কাজের সন্ধানে দালালচক্রের মাধ্যমে ভারতে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। 
বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ জানান, ধানুয়া কামালপুর সীমান্তে পুশইন করার পর স্থানীয়রা সাতজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে। আটককৃতরা হলোÑ খুলনার খালিশপুর উপজেলার নূরনগর বিশ্বাসপাড়ার মৃত সোহাগ মিয়ার মেয়ে সুমি আক্তার, তার বোন রুমি আক্তার সোহাগী, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ঘুটাবাছা গ্রামের রুস্তম খানের মেয়ে মায়া বেগম, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পাটমারা গ্রামের বেলায়েত খান ও তার ছেলে মোহাম্মদ ইসলাম, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বগাইল গ্রামের মেহেবুব আলমের স্ত্রী তাসলিমা ও তার ছেলে কুরবান আলী। আটককৃতদের বিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।