বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চান অ্যালেক্স মার্শাল। বিসিবির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের (আকু) পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের সাবেক এই ডাকসাইটে কর্মকর্তা। একসময় যুক্তরাজ্য পুলিশের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মার্শাল। এবার বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে তার। এরই মধ্যে ঢাকায় এসে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন তিনি।
গত মঙ্গলবার ক্রিকেটারদের সঙ্গে ‘শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার’ সেশন করেছেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও অন্য বোর্ড পরিচালকেরা। সেখানে একটি সেশন ছিল মার্শালেরও। তিনি জানালেন, ‘আমি এখানে এসেছি সভাপতি ও বোর্ডের সঙ্গে মিলে এমন একটি ইন্টেগ্রিটি ইউনিট গড়ে তুলতে, যা এই খেলায় সব ধরনের হুমকি থেকে রক্ষা করবে। সিকি শতাব্দী ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট শীর্ষ পর্যায়ে খেলছে এবং এখনই এটা নিশ্চিত করার সময়, সমর্থকেরা যেকোনো ধরনের খেলাই দেখুন, বাংলাদেশের হয়ে যে ক্রিকেটাররা খেলছে, যে ছেলে ও মেয়েরা খেলছে, তাদের যেন সব ধরনের হুমকি থেকে সঠিকভাবে সুরক্ষিত করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডোপিংয়ের হুমকিও সব সময় আছে এবং সব খেলাকেই ডোপিংয়ের বৈশ্বিক নিয়ম মেনে চলতে হয়। তবে ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় হুমকি হলো দুর্নীতিবাজেরা, যারা সব সময়ই সুযোগ খুঁজছে ক্রিকেটারদের ঘুষ দিয়ে বাজে খেলতে। আমরা নিশ্চিত করব, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা, ছেলে-মেয়ে যারাই খেলছে, তাদের যেন ঠিকভাবে সুরক্ষা দেওয়া যায়। আজকে বোর্ড সভাপতি, প্রধান নির্বাহী ও কয়েকজন বোর্ড সদস্যের সঙ্গে দেখা করেছি।
খেলাটিকে সুরক্ষা দিতে তারা সবাই দারুণভাবে সহায়ক।’ বাংলাদেশের ক্রিকেটে উল্লেখযোগ্য ডোপিং কেলেঙ্কারির ঘটনা নেই। তবে ফিক্সিং, স্পট ফিক্সিংসহ নানা দুর্নীতির ঘটনা ও অভিযোগের শেষ নেই। সেসব দূর করে এ দেশের ক্রিকেটকে পরিষ্কার করে তুলতে চান মার্শাল। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ইন্টেগ্রিটি ইউনিট গড়ে তুলব, যেটির লক্ষ্য হবে সবাইকে শিক্ষিত করে তোলা নিশ্চিত করা, তারা যেন অনুধাবন করতে পারে হুমকিগুলো কেমন হয়ে থাকে, তাদের কী করতে হবে, দলে নিজেরাই যেন নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বলয়ে থাকে এবং এটা নিশ্চিত করা যেন দুর্নীতিবাজদের তাড়িয়ে দেওয়া যায়।
আমরা তাদের বাংলাদেশে চাই না, তাদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে হবে। ইন্টেগ্রিটি ইউনিট শক্ত বার্তা দিতে চায় যে, বাংলাদেশে খেলাটি স্বচ্ছ থাকবে এবং এই বোর্ড ও সভাপতি সেই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।’ ৬৪ বছর বয়সি সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার সতর্ক নজর থাকবে বিপিএলে। গত বিপিএলে দুর্নীতির নানা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠিত হওয়ার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সূত্রে কয়েক দিন ধরে নানা খবর প্রকাশিত হয়েছে দেশের কিছু সংবাদমাধ্যমে। যদিও সেই প্রতিবেদন বোর্ডের কাছে জমা দেওয়া হয়নি এখনো। আগামী সপ্তাহে তা জমা দেওয়ার কথা। তবে বিপিএল ঘিরে সন্দেহ-সংশয়ের প্রবল বিষবাষ্প সব সময়ই ছিল এবং আছে।
বিপিএলকে সেই কালিমা থেকে মুক্ত করতে চান মার্শাল। তিনি বলেন, ‘আইসিসি ছাড়ার সময় আমি বলেছিলাম, ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় হুমকি যে কোনো জায়গারই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, যেটিকে নড়বড়ে মনে হয়। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, বিপিএলকে যেন দুর্বল লিগ মনে না হয়। কাজেই এই আসর যেভাবে চলছে, আর্থিক ব্যাপারগুলো যেভাবে পরিচালিত হয়, দলের মালিকানা যেভাবে চূড়ান্ত করা হয়, এই ব্যাপারগুলো উচুমানের ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে হতে হবে এবং সুরক্ষিত রাখতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগকে যদি পেশাদার ও সুরক্ষিত না মনে হয়, তাহলে তা দুর্নীতিবাজদের লক্ষ্যে পরিণত হয়। অনেক দেশেই এটা হতে দেখেছি আমরা এবং বিপিএলও কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে অতীতে। এ জন্যই নতুন ইন্টেগ্রিটি ইউনিটকে এই লিগের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন