বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ আজ শুরু হচ্ছে। গতকাল সকালে এই সিরিজের ট্রফি উন্মোচন হয়েছে। ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লায় স্থাপনার ভেতরে দাঁড়িয়ে গেলেন দুই অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ও শাই হোপ। বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বড় একটি অংশ লালবাগ কেল্লা। এর ভেতরে অবস্থিত পরীবিবির মাজারের সামনে হয়েছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের ট্রফি উন্মোচন। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে দুই বছরের বেশি সময় পর মিরপুরে ফিরছে ওয়ানডে ক্রিকেট। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের পর আর এই মাঠে হয়নি ৫০ ওভারের আন্তর্জাতিক ম্যাচের লড়াই। এবার এই সিরিজে বাংলাদেশের প্রতিশোধের মিশনও। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। ফিরতি সিরিজে এবার প্রতিশোধের সুযোগ মিরাজদের। গত আফগানিস্তান সিরিজের ব্যর্থতা ভুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজির বিপক্ষে নতুন শুরু চান বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স।
ওয়ানডে সিরিজ শুরু হওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে ক্যারিবীয় কোচ সিমন্স বলেছেন, ‘শেষ সিরিজে যা হয়েছে, সেটা পেছনে ফেলে দিতে হবে। আমরা জানি, আমরা তার চেয়ে অনেক ভালো দল এবং অনেক ভালো খেলতে পারি। তাই অনুশীলনে এখন পুরো মনোযোগ আমাদের।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেছি, তাদের স্পিনাররা দুর্দান্ত। তাই এই অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে আসবে। এখন আমাদের স্পিনার আর পেসাররা নিজেদের কাজটা ভালোভাবে করছে।’ মিরাজের নেতৃত্বের প্রশংসা করে টাইগার কোচ সিমন্স বলেন, ‘মিরাজের অধিনায়কত্ব নিয়ে এখনই বিচার করা ঠিক না। মাঠে তার নেতৃত্ব ভালো, কিন্তু ম্যাচ জেতা নির্ভর করে ব্যাটসম্যানদের ওপরও। যদি ব্যাটসম্যানরা রান না করে, তাহলে কোনো অধিনায়কই জিততে পারবে না। মাঠে মিরাজ ভালো করছে, কিন্তু জেতার জন্য সবার অবদান দরকার।’ কোচ সিমন্সের মতে, দলের দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর মূল কৌশল হতে হবে মানসিকভাবে ইতিবাচক থাকা এবং প্রস্তুতিতে ফোকাস রাখা। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি অনুশীলনে সঠিক দিকটা বজায় রাখতে। আগের ভুলগুলো ভুলে যাই, নতুন দিনে কীভাবে ভালো খেলব, সেটাই ভাবি।’ তরুণ ক্রিকেটারদের পরিপক্বতা বাড়ানোই এখন অন্যতম লক্ষ্য। সিমন্স বলেন, ‘আমাদের দলে অনেক তরুণ আছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সময় নিয়ে পরিণত হয়, কেউ দ্রুত শেখে। আমরা চাই, ওদের মধ্যে সেই পরিণতিটা দ্রুত আসুক, কারণ ওদের সামর্থ্য আছে সেরা হওয়ার।’
অন্যদিকে, সামাজিক মাধ্যমে ক্রিকেটারদের উচ্চকিত দেখতে চান না সিমন্স। তবে জাকের আলীর প্রতি বর্ণবিদ্বেষী আচরণের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বাংলাদেশ কোচ। তিনি বলেন, ‘আমি চাই না ক্রিকেটাররা সামাজিক মাধ্যমে কোনো ধরনের জবাব দেবে।’ সিমন্সের মতে, ক্রিকেট সমর্থক ও অনুসারীদের অধিকার আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা ইচ্ছা বলার বা লেখার। তবে কোচ এটিও উল্লেখ করছেন, বর্ণবাদমূলক কোনো কিছু গ্রহণযোগ্য নয়। সম্প্রতি আমিরাত থেকে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে ক্রিকেটারদের হেনস্তা হওয়ার ঘটনা নিয়ে এই মন্তব্য করেন সিমন্স। দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় কিছু সমর্থকের প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়েন মোহাম্মদ নাঈম শেখ, তাসকিন আহমেদসহ কয়েকজন ক্রিকেটার। সেই ঘটনা নিয়ে পরে সামাজিক মাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করায় আবার ক্রিকেট অনুসারীদের তোপের মুখে পড়েন নাঈম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগের দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বাংলাদেশ কোচ যেন এই প্রশ্নের অপেক্ষাতেই ছিলেন। সিমন্স বলেন, ‘আমি খুশি যে আপনি প্রসঙ্গটি তুলেছেন। প্রথমত বলতে চাই, সামাজিক মাধ্যমে কী হচ্ছে, এসব নিয়ে ক্রিকেটারদের কিছু করার আছে বলে আমি একদমই মনে করি না। ব্যক্তি হিসেবে সবারই অধিকার আছে সামাজিক মাধ্যমে যা ইচ্ছা বলার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও জাতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আমার ক্রিকেটারদের অবশ্যই উচিত নয় এসবের জবাব দেওয়া।’ তবে ‘যা কিছু বলার অধিকার’, মানে যে বর্ণবাদী মন্তব্য বা আচরণ নয়, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে জাকের আলির প্রতি বর্ণবাদমূলক নানা মন্তব্যের উদাহরণ তুলে ধরলেন কোচ। সিমন্স বলেন, ‘তবে একটি কথা বলতে চাই, ক্রিকেটারদের প্রতি কোনো ধরনের বর্ণবিদ্বেষী সুর কোনোভাবেই থাকা ভালো কিছু নয়। আপনি যেখান থেকেই আসেন না কেন, আই ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু জাকের আলীর প্রতি যা হয়েছে, সেসবে আমি ক্ষুব্ধ। ভালো কিছু নয় এসব। তবে আপনাকে বলতে পারি, আমি চাই না আমার ক্রিকেটাররা সামাজিক মাধ্যমে কোনো ধরনের জবাব দেবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন