ঢাকা শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫

বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড প্রথম টেস্ট

শান্তর ব্যাটে অষ্টম সেঞ্চুরি ও বাংলাদেশের রেকর্ড

মাঠে ময়দানে প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৫, ০১:৩৮ এএম

সিলেটে সফরকারী আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে রীতিমতো রানের উৎসব করেছে বাংলাদেশ। গতকাল ম্যাচের তৃতীয় দিন ৮ উইকেটে ৫৮৭ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা দেয় স্বাগতিকেরা। প্রথম ইনিংসে ২৮৬ রান করেছিল আয়ারল্যান্ড। ফলে ৩০১ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টম সেঞ্চুরি পান। ১১৪ বলে ১৪টি চারের সাহায্যে ঠিক ১০০ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। নিজেদের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের প্রথম চার ব্যাটসম্যান পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছেন। টেস্টে এই প্রথম এক ইনিংসে বাংলাদেশের প্রথম চার ব্যাটসম্যানই ফিফটি পেলেন। তবে টেস্ট ইতিহাসে এক ইনিংসে কোনো দলের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের ফিফটি পাওয়া নতুন ঘটনা নয়।

এ পর্যন্ত ৮৩ বার এক ইনিংসে প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে ফিফটি করতে দেখেছে টেস্ট ক্রিকেট। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানই ফিফটি পেয়েছেন ২৪টি ইনিংসে। প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের ফিফটি পাওয়ার ঘটনা আছে ছয়বার। প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের ফিফটি পাওয়ার ঘটনাও আছে একটি। সেই কীর্তিটা পাকিস্তান দলের। ২০০৬ সালে করাচিতে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানই ৫০ ছাড়িয়ে যান। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩৯ রান করেছিলেন ফয়সাল ইকবাল। ৫০ পেরোনো অন্য ছয় ব্যাটসম্যানের কেউই সেঞ্চুরি পাননি। এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসের প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিক পেয়েছিলেন ভারতের ইরফান পাঠান। টেস্টে এক ইনিংসে সাত ব্যাটসম্যানের ফিফটি পাওয়ার আরও দুটি ঘটনা আছে। তবে সেই দুবার ব্যাটিংক্রমের সাতের নিচের ব্যাটসম্যানরাও ফিফটি পান। প্রথমবার ১৯৩৪ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে। আর শেষবার ২০০৬ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে।

আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশের প্রথম চার ব্যাটসম্যানই ৮০ বা এর বেশি রান করেছেন। টেস্ট ইতিহাসে এক ইনিংসে প্রথম চার ব্যাটসম্যানের ৮০ করার এটি মাত্র ১১তম ঘটনা। বাংলাদেশ এর আগে এমন কীর্তির ভুক্তভোগী ছিল। ২০০৭ সালে মিরপুরে ভারতের প্রথম ইনিংসে প্রথম চার ব্যাটসম্যানই সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। টেস্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ পাঁচ ব্যাটসম্যানকে ৮০ ছাড়ানো ইনিংস খেলতে দেখেছে ১০ বার। সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের পাঁচ ব্যাটসম্যান ৫০ ছাড়িয়েছেন। এ নিয়ে পঞ্চমবার এমন ব্যাটিং কীর্তি দেখল বাংলাদেশ।

দিনের শুরুর দিকে ৩ উইকেট শিকার করে প্রথম সেশনটা নিজেদের করে নিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। তবে অধিনায়ক শান্ত ও লিটন দাসের ব্যাটে পাল্টা আক্রমণে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে ১৮তম ফিফটি তুলে নেন লিটন। এরপর অবশ্য আর বেশি দূর এগোতে পারেননি এই উইকেটকিপার ব্যাটার। লিটন ফিরলেও দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন টেস্ট অধিনায়ক শান্ত। ১২৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জোড়া রান নিয়েই ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। অবশ্য সেঞ্চুরির এক বল পরেই এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের তরুণ ওপেনার মাহমুদুলের শেষ অধ্যায় দিয়ে। আগের দিন ১৫৪ থেকে ১৭১ এ ক্লাসিক টেস্ট ইনিংসের সুন্দর সমাপ্তি।

তার ২৮৬ বলের ইনিংসে ছিল ১৪ চার ও ৪ ছক্কার সাজানো এক ধৈর্যের প্রতিমূর্তি। মুমিনুল হকও খেলেছেন দায়িত্বশীল এক ইনিংস, ৮২ রানে বিদায় নিয়েছেন ব্যারি ম্যাককার্থির বলে। তবে এখানেই থামেনি বাংলাদেশের রানের ধারা। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত নামতেই বদলে যায় গতি। আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলা তার ১১৪ বলে ১০০ রানের ইনিংসে ছিল ১৪টি চারের মার। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও একপাশে সঙ্গ দিয়েছিলেন, যদিও ৯৯তম টেস্টে ৫২ বলে ২৩ রানে আউট হয়ে যান তিনি। এরপর লিটন দাসের ব্যাট থেকে এসেছে ৬৬ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ৬০ রানের ইনিংস।