শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ছুটি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ১২:৫৪ এএম

পুরান ঢাকার স্মৃতিঘর ‘লালকুঠি’

ছুটি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ১২:৫৪ এএম

পুরান ঢাকার স্মৃতিঘর ‘লালকুঠি’

ঢাকা একটি পুরোনো শহর। এ শহর ঐতিহ্যের শহর। তাই তো ঢাকার নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা স্থাপনা; যা ইতিহাস বয়ে বেড়ায়। পুরান ঢাকার সরু গলিপথ পেরিয়ে বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে এগোলেই চোখে পড়ে লালচে ইটের বিশাল এক দালান। এই দালানটির স্থানীয় নাম লালকুঠি; যাকে অনেকে নর্থব্রুক হল নামেও চেনেন।  লালকুঠিতে এক সময় ঢাকার সংস্কৃতির আসর, জমিদার-উচ্চবিত্তদের আড্ডা, নাটক, গান, সভা-সমাবেশ ইত্যাদি চলত হরদম। পরিবেশ সবসময় থাকত ভরাট। অথচ, সেই লালকুঠি এখন দাঁড়িয়ে আছে অজানা এক নিস্তব্ধতা নিয়ে। নেই কোনো কোলাহল, নেই কোনো আড্ডা।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, লালকুঠি নির্মাণ করা হয় ইংরেজ শাসনামলে। সেটাও ১৮৭৪ সালে। ব্রিটিশ গভর্নর লর্ড নর্থব্রুকের নামে এটির নামকরণ করা হয় ‘নর্থব্রুক হল’। লাল রঙের ইটের জন্য সাধারণ মানুষের মুখে জায়গাটি চিরকাল ‘লালকুঠি’ নামেই পরিচিত। তবে সে সময় জায়গাটি টাউন হল নামেও পরিচিত ছিল। ১৮৮২ সালে ভবনটি টাউন হল থেকে পাঠাগারে রূপান্তর করা হয় এবং এর সঙ্গে জনসন হল নামে একটি ক্লাবঘর সংযুক্ত করা হয়। স্বল্পসংখ্যক বই নিয়ে পাঠাগারটির যাত্রা শুরু হলেও কয়েক বছরের মধ্যে এর বই সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১৮৮৭ সালে এই পাঠাগারের জন্য বিলেত থেকে বই আনা হয়েছিল। ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই ভবনটিতে ঢাকার জমিদার, বণিক আর সংস্কৃতিপ্রেমীরা আয়োজন করতেন নাটক, সংগীত ও নৃত্যানুষ্ঠানের। কলকাতার প্রভাব ঢাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল এই লালকুঠিকে ঘিরেই।

শুধু বিনোদনই নয়, এটি ছিল সামাজিক-রাজনৈতিক আলোচনারও কেন্দ্র।  ১৯২৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি (ঢাকা পৌরসভা) ও পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে লালকুঠিতে সংবর্ধনা দেওয়া হয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। ঢাকার সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ আর গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ভিড় করেছিলেন সেই সংবর্ধনায়। শুধু রবীন্দ্রনাথই নন, এই ভবনের দেয়াল সাক্ষী থেকেছে আরও অনেক নাট্যচর্চা, সাহিত্যসভা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের। এক সময় এখানে গড়ে ওঠা জনসন হল আর সংলগ্ন লাইব্রেরি পুরান ঢাকার জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবেও খ্যাতি পায়।

তবে পাকিস্তান আমল থেকে নর্থব্রুক হল তার ঐতিহ্য হারাতে শুরু করে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শ্রীহীন হয়ে পরে পাঠাগারটি। ধীরে ধীরে কমতে থাকে এর পাঠক সংখ্যা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ পাঠাগারের অধিকাংশ বই নষ্ট হয়ে যায়। স্বাধীনতার পরও গ্রন্থাগারের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন সময়ে নর্থব্রুক হলের আশপাশে নির্মিত হয় সম্মেলন কেন্দ্র ও গণমিলনায়তনের মতো ভবন যা এর আকর্ষণকে অনেকাংশে ম্লান করে দিয়েছে।

যদিও দীর্ঘদিন লালকুঠিটি অবহেলায় পড়ে থাকার কারণে তার জৌলুস হারাতে বসেছিল। তবে বর্তমানে ভবনটিতে চলছে সংস্কার কাজ। নতুন রঙের প্রলেপে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে দেড়শ বছরের পুরোনো লালকুঠির সৌন্দর্য। ভবনের সম্মুখে তৈরি করা হয়েছে মার্বেল পাথরের বৃহৎ ফোয়ারা। সংস্কারকাজে মূল কাঠামো, কাঠের দরজা-জানালা ও কারুকাজ পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে আদি নকশা অনুসরণ করে। দেয়ালের ফাটল মেরামত, ভাঙা জানালা বদল, রঙ-চঙ সব মিলিয়ে পুরোনো ভবনটিকে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা চলছে। ঢাকার ইতিহাসপ্রেমীরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!