বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম

‘ঘুষকে’ বৈধতা দিল শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি, সমালোচনার ঝড়

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম

‘ঘুষকে’ বৈধতা দিল শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি, সমালোচনার ঝড়

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি সভা ডেকে রেজল্যুশন করে ‘ঘুষ’ দেওয়াকে বৈধতা দিয়েছে। ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করা-সংক্রান্ত সভার রেজল্যুশনের অংশ বিশেষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

তবে ঘুষের পরিমাণ সহনীয় পর্যায় নামিয়ে আনা এবং হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম কাশেম। আর এই সিদ্ধান্তকে নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং খাটো করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শেখ মহসিন স্বপন। 

৬ মার্চ শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত ভাইরাল হওয়া রেজল্যুশনে দেখা যায়, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী সভা ৬ মার্চ বেলা ২টায় শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে অ্যাড. সুলতান হোসেন মিয়া সভাকক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সভাপতি অ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম কাশেম এবং সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মুহাম্মদ কামরুল হাসান।

সভার শুরুতে অ্যাজেন্ডাভিত্তিক আলোচনায় সকলে সদস্য অংশগ্রহণ করেন এবং নিম্ন বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

সিদ্ধান্ত নম্বর-২: পেশকার/পিয়নকে সিআর (নালিশি) ফাইলিংয়ে ১০০ টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত নম্বর-৩: যেকোনো দরখাস্তে জিআর/সিআর ১০০ টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত নম্বর-৪: জামিননামা দাখিলের খরচ মামলা প্রতি ১০০ টাকার নিচে না এবং ২০০ টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত নম্বর-৫: গারদখানায় ওকালতনামায় স্বাক্ষরে ১০০ টাকা, সিভিল ফাইলিংয়ে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ও হলফনামায় ১০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 

আর কোনো আলোচনা না থাকায় সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে সভাপতি সভার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

এই রেজল্যুশনের অংশ বিশেষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

নাগরিক সমাজ এটাকে ঘুষকে অফিশিয়ালি বৈধতা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন। অথচ এই ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শরীয়তপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির তার ফেসবুকে শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভায় পাস হওয়া রেজল্যুশনের অংশ বিশেষ পোস্ট করে সেখানে লিখেন, ‘ঘুষের সার্টিফিকেট দিল শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি।’

পলাশ খান নামে একজন সভায় পাস হওয়া রেজল্যুশনের অংশ বিশেষ ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেন, ‘এখন আদালতে প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেন হবে বাহ্।’

শাহিন আলম নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁর আইডিতে শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভায় পাস হওয়া ওই রেজল্যুশনের অংশবিশেষ পোস্ট করে লিখেন, ‘অনিয়ম যখন দীর্ঘদিন ধরে চলে, তখন সেটা আইন হয়ে যায়। সেটার প্রমাণ এই মিটিংয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো। আমাদের সমাজ আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?’

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম কাশেম জানান, ‘শরীয়তপুর কোর্ট কাচারিতে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ নেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। কোর্টের কর্মচারীরা ইচ্ছামতো যার থেকে যা পারছে আদায় করে নিচ্ছে। আমরা চাচ্ছি এটা বন্ধ হোক। যেহেতু এটা একবারে হুট করে বন্ধ করা যাবে না, তাই সভায় ঘুষের পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে নির্দিষ্ট আকারে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যাতে আমরা কেউ হয়রানির শিকার না হই। ভবিষ্যতে আমরা এই অনৈতিক লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেব।’ 

এ বিষয়ে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শেখ মহসিন স্বপন জানান, ‘আইনজীবী সমিতি সভা ডেকে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করে এ ধরনের অংশবিশেষ রেজল্যুশন ভাইরাল করায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। এটা নজিরবিহীন। ঘুষকে রেজল্যুশন আকারে বৈধতা দেওয়া হয় এটার কোনো ইতিহাসে নাই। এটা করে তারা বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং খাটো করেছে। তারা এই কাজটা ঠিক করে নাই। তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করেন, তারা এই কাজটা কেন করলেন? ৫ আগস্টের পরে এ ধরনের লেনদেন টোটালি বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের জজ স্যার, চিফ স্যার এ ব্যাপারে সোচ্চার রয়েছেন। কোনো ফাইল বা কোনো কাজ আটকে থাকছে না। সকল কাজ যথাসময়ে হয়ে যাচ্ছে। তাহলে কেন আমাদের স্টাফদের ঘুষের আওতায় আনা হলো, আমি জানতে চাই।’

এ বিষয়ে শরীয়তপুর কোর্ট পরিদর্শক শিমুল সরকার জানান, ‘আমি জানতে পারছি আইনজীবী সমিতি মিটিং করে ঘুষের রেট নির্ধারণ করেছে, এটা তাদের বিষয়। তারা এ বিষয়ে আমাকে এখনো কিছু জানায়নি। আমাদের এখানে ঘুষ নেওয়ার সঙ্গে কেউ জড়িত আছে কি না তা-ও আমার জানা নেই। এ রকম যদি কেউ ঘুষ নিয়ে থাকেন তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্যানেল ১৫টি পদের মধ্যে ১৫টি পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

 

আরবি/আবু

Link copied!