কুষ্টিয়া জেলা বিএনপিতে মেহেদী-সোহরাব যুগের অবসান হয়েছে। বিগত এক যুগ নানা টানা পোড়েনের মধ্যেও দলের হাল ধরে রাখলেও নতুন কমিটি থেকে ছিটকে পড়েছেন এই দুই শীর্ষ নেতা।
দুই নেতার বিরুদ্ধে অতীতে দলীয় কর্মসূচী ঠিকঠাকভাবে পালন না করা, রাজপথের বদলে ঘরবন্দি হয়ে পড়া, কর্মীদের খোঁজ-খবর না রাখাসহ নানা অভিযোগ থাকায় দলের নতুন নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়েছেন বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।
তাদের স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। গত ২৫ সেপ্টেম্বর কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারকে সদস্য সচিব করে নতুন কমিটি দেওয়ার পর নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব ফিরে এসেছে। একই সাথে হামলা-মামলায় জর্জরিত দলটি ৫ আগস্টের পর থেকে নেতা-কর্মীরা এখন স্বাধীনভাবে সব কর্মসূচী পালন করতে পারায় ফুরফুরে মেজাজে আছে।
বিগত কয়েক বছর ধরে রাজপথে সক্রিয় থেকে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা, মামলায় আসামি হওয়া নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো, দুস্থ কর্মীদের পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচীতে সফলভাবে অংশগ্রহণ করার কারনেই নতুন কমিটিতে কুতুব উদ্দিন ও জাকির সরকারকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।
একই সঙ্গে এ দুই নেতা কর্মীবান্ধব হওয়ায় তাদের আলাদা জনপ্রিয়তা আছে তৃণমূলে। যার ফলে নতুন কমিটি ঘোষণার পর ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
জানতে চাইলে নতুন কমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, রাজপথ কোন কর্মীর সাথে বেঈমানী করে না। বিগত ১৬টি বছর হামলা-মামলা, জেল-জুলুম সত্বেও প্রতিটি কর্মসূচীর অগ্রভাবে ছিলাম। ঝুঁকি জেনেও পিছপা হয়নি। জেলা ছাড়াও বিভাগীয় ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচীতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্বে দিয়েছি। যার ফলাফল নতুন কমিটিতে গুরুদায়িত্ব পেয়েছি।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর এখন নেতা-কর্মীরা মুক্ত পরিবেশে কাজ করতে পারছে। কুষ্টিয়া যে বিএনপির ঘাঁটি সেটা আগামীদিনে আবার প্রমাণ হবে বলে জানান ওই নেতা।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। সেই কমিটির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী এবং সাধারণ সম্পাদক হন অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন। তার আগে আরো প্রায় এক দশক জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী।
এদিকে, নতুন কমিটি থেকে দলের সিনিয়র দুই নেতা বাদ পড়ায় তার অনুসারীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এতদিন যারা সোহরাব উদ্দিনের বলয়ে রাজনীতি করতেন তাদের বড় অংশ কুতুব উদ্দিন আহমেদের সাথে মিশে গেছেন। আর মেহেদী রুমীর যে বলয় ছিল তাদের প্রায় সবাই জাকির হোসেন সরকারের সাথে আগে থেকে রাজনীতি করে আসছিলেন। এখন নতুন কমিটির বাকিরাও জাকির হোসেনের বলয়ে ভীড়ে গেছেন।
দুই সদস্যের পর আহ্বায়ক কমিটির বাকি সদস্যের নিয়ে একটি কমিটি দেওয়া হবে। সেই কমিটির সদস্য সংখ্যা ৩১ হতে পারে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। আহ্বায়ক কমিটিতে পদ পেতে ইতিমধ্যে তৎপরতা চালাচ্ছে জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সদস্যসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ ছাত্রদলের সাবেক নেতারা।
জেলা বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ৩১ সদস্যের একটি খসড়া কমিটি প্রস্তুত করা হয়েছে। চুড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে সেটি।
জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির কোষাধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, নতুন একটি ভালো কমিটি পেয়েছে কর্মীরা। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব দুই নেতাই কর্মীবান্ধব। অত্যাচার নির্যাতনের পরও জেলা বিএনপি আগের যে কোন সময়ের তুলনায় ঐক্যবদ্ধ।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট শামীম উল হাসান অপু বলেন, সামনে দলের জন্য অনেক অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যারা বিগত সময়ে দলকে সংগঠিত করেছে, কর্মীদের মূল্যায়ন করেছে বিপদে-আপদে পাশে ছিল তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। কোন হাইব্রিড ও সুবিধাবাদীকে দলের কোন পদে দেখতে চাই না কর্মীরা।
এদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ ও নেতৃত্বে সব আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়ে হাসিনার পতন ঘটিয়েছি। এখন নতুন কমিটিতে আমাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। নতুন চ্যালেঞ্জ আমার জন্য। এখন দলকে ঢেলে সাজাতে হবে। সব ইউনিটে নতুন কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিএনপি জনগনের দল। এ জেলা বিএনপির ঘাঁটি সেটা আগামী নির্বাচনে আবারো প্রমাণ হবে বলে মনে করি। আর যোগ্য, সৎ ও দলের অনুগত কর্মীদের মাধ্যমে দল পরিচালিত হবে।