ঢাকা রবিবার, ০৪ মে, ২০২৫

আ.লীগের প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসার আড়ালে ফাঁদে ফেলে অর্থ আত্মসাৎ

জয়পুরহাটে অলেঢ সম্পদের মালিক রফিকুল আলম

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৪, ০৮:০৬ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জয়পুরহাট জেলা সদরে অতি সুকৌশলে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলে হয়রানি ও অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে মেসার্স রফিক এন্ড ব্রাদার্স এর সত্ত্বাধিকারী মো. রফিকুল আলম ও তার ম্যানেজার শাহ নেওয়াজ আলী মজনুর বিরুদ্ধে। এসব করে ইতিমধ্যে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন মো. রফিকুল আলম।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন, রফিকুল আলম তার ম্যানেজার শাহ নেওয়াজ আলী মজনুর মাধ্যমে অনেক ব্যবসায়ীকে ভারাটে সন্ত্রাসী ও মাস্তান লেলিয়ে দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করলেও তার ভয়ে কেউ কিছু বলতে বা প্রতিবাদ করতে পারেনি। ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে তিনি যা দাবি করেছেন তা কড়ায়গণ্ডায় যেকোনো উপায়ে উশুল করেছেন।

হিসাবে গড়মিল দেখিয়ে জয়পুরহাট জেলা সদরের  রাহাত এন্টারপ্রাইজ এর কাছে ১৩ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা বকেয়া উল্লেখ করে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোসহ বিভিন্ন সময় ভারাটে সন্ত্রাসী ও মাস্তান পাঠিয়ে নানা ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শনের কথা জানান, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. রমজান আলী।

এ বিষয়ে রাহাত এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মো. রমজান আলী বলেন, মেসার্স রফিক এন্ড ব্রাদার্সের সত্ত্বাধিকারী মো. রফিকুল আলমের সাথে আমি ২০২০ইং থেকে ২০২১ইং সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সুনামের সহিত রড-সিমেন্টের ব্যবসায়ীক লেনদেন করে আসছিলাম এবং ২০২২ইং সালে সমস্ত দেনাপাওনা পরিষোধ করে দেই। হঠাৎ করে ২০২২ইং সালের জুন মাসের ০৯ তারিখে ৭লাখ ১৭হাজার ২৯০টাকা বকেয়া দেখিয়ে আমাকে হালখাতার একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। হালখাতার চিঠি প্রাপ্তির পর আমি ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার শাহ নেওয়াজ আলী মজনুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে বলেন, আপনার বন্ধু এ এন্ড জেড বিল্ডার্স এর সত্ত্বাধিকারী মোঃ আসলাম হোসেনের কাছ থেকে পাওনা টাকা আপনাকে দিতে হবে। আর সেজন্যই আপনাকে হালখাতার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তখন আমি বলি আপনাদের সাথে আমার বন্ধুর লেনদেন বিষয়ে আমার তো কোন প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই বা আমি তার জিম্মাদারও নয়। তাহলে অন্যের পাওনা টাকা আমি কেন পরিষোধ করতে যাব। জবাবে ম্যানেজার মজনু আমার বন্ধুর বকেয়া টাকা তুলতে সহযোগীতা চাইলে আমি চেষ্টা করে অপারগতা শিকার করি। পরে ২০২৩ইং সালের জুন মাসের ১৫ তারিখে ৬লাখ ১৭হাজার ২৯০টাকা বকেয়া দেখিয়ে আমাকে আবারও হালখাতার একটি চিঠি দিলে আমি ম্যানেজারের সাথে দেখা করতে চাইলে সে আমার দেখা নাকরে আমার গ্রামের বাড়ি ও শশুড় বাড়িতে বিভিন্ন সময় ভাড়াটে মাস্তান পাঠিয়ে দিয়ে নানা ভয়ভিতি ও হুমকি দেওয়া শুরু করে।

নিরুপায় হয়ে আমি জয়পুরহাট ডিবি পুলিশের স্মরনাপন্ন হলে ডিবির একজন অফিসার তখন ম্যানেজার মজনুর সাথে যোগাযোগ করে আমার কাছে দাবিকরা বকেয়া অর্থের হিসাব ও ডকুমেন্ট নিয়ে আসতে বললে তাতে সে কোন কর্ণপাত করেনি। পরবর্তিতে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক ম্যানেজার মজনু তার সাথে কাউসার ও উজ্জলসহ আমার বাসায় আসলে মেহমাদারীর এক পর্যায়ে আমার সয়ন কক্ষে ওয়ারর্ডপের উপর থেকে অস্বাক্ষরিত কয়েকটা চেকের পাতা চুরি করে নিয়ে যায়। তার কিছুদিন পর আমাকে চেকের মামলার হুমকি দিলে হতভম্ভ হয়ে তাকে বলি আমি তো আপনাকে কোন চেক প্রদান করিনি তাহলে চেকের মামলার ভয় দেখাচ্ছেন কেন? অনেক চিন্তা-ভাবনা করে সন্দেহ হলে আমার চেকবহি বের করে দেখি, সেখান থেকে কয়েকটি পাতা সে যেদিন আমার বাড়িতে এসেছিল তখনই চুরি করে নিয়ে গেছে। চেকের পাতা হারানোর বিষয়ে আমি জয়পুরহাট সদর থানায় গত ২০২৪ইং সালের ১১ আগস্টে অনলাইনে জিডি আবেদন করি। তখন থানায় কম্পিউটারের সমস্যা থাকায় ১৪ আগস্ট সেই জিডি পুলিশ আমলে নেয়। যাহার জিডি ট্রাকিং নাম্বার: ৪ওইট৯৪, জিডি নং- ২৯৪। এমতাস্থায় ২০২৪ইং সালের ১৪ সেপ্টম্বর ১৩লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা বকেয়া উল্লেখ করে আমাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হলে সেটি আমি ০৯ অক্টোবর হাতে পেয়ে দেখি লিগ্যাল নোটিশে জিডিতে উল্লেখিত চেক নাম্বার দেওয়া আছে। কিভাবে আমার কাছে বকেয়া টাকা পাবে সেটি বের করতে আমি তাহার সাথে লেনদেনের সমস্ত হিসাবের ডকুমেন্ট যাচাই করে দেখি অন্যায়ভাবে আমার কাছ থেকে টাকা চাচ্ছে। হিসেব অনুযায়ী উল্টো আমি তার কাছ থেকে প্রায় ৩লাখ টাকার মতো ফেরত পাই। যাহা তিনি হিসেবে গড়মিল দেখিয়ে বেশি নিয়েছে এবং আবারও আমার কাছে বকেয়া দাবি করায় আমি চরম বিপাকে পরেছি। উক্ত লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা আছে আমি নাকি স্ব-শরিরে তার প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে চেক প্রদান করেছি। যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যদি তাইহয় তাদের প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা আছে। সেখানে আমার উপস্থিতির ফুটেজ অবশ্যই থাকবে। তারা যদি ফুটেজ দেখাতে পারে তাহলে আমার কাছে বকেয়া টাকা না পাওয়া সর্ত্তেও তারা অন্যায়ভাবে যে টাকা দাবি করছে আমি তা দিয়ে দিব। 

আমি এই প্রতারণার তিব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি এবং খুব শিঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব, যাতে তারা আমার মতো আরকোন ব্যবসায়ীর সাথে এরকম প্রতারণা না করতে পারে।