শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৪, ০৪:২৬ পিএম

কর্ণফুলীর শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৪, ০৪:২৬ পিএম

কর্ণফুলীর শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চট্টগ্রামের শুঁটকির সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। খাদ্যরসিকদের কাছে এটি একটি অতি প্রিয় খাবার। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই শুঁটকি। কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো শুঁটকিপল্লী।

কর্ণফুলীর উত্তরে বাকলিয়া এবং দক্ষিণে ইছানগর, চরপাথরঘাটা এলাকায় শুঁটকির ব্যবসা করে হাজার হাজার মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এখন শুঁটকি তৈরির মৌসুম। শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় শুঁটকি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। প্রতি বছর শীতের শুরুতে চট্টগ্রামের শুঁটকিপল্লীগুলোতে শুঁটকি তৈরির ধুম পড়ে যায়।

কর্ণফুলীর তীরে শুঁটকি শ্রমিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত কয়েক মাস ধরে এখানে নানা ধরনের শুঁটকি তৈরি হচ্ছে। শুঁটকি শুকানোর পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজও জোরেশোরে চলছে। এই শুঁটকিগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। এছাড়াও কিছু শুঁটকি রপ্তানিও করা হয়। শীতকালে শুঁটকির উৎপাদন বেশি হয় এবং চাহিদাও বেশি থাকে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের শুঁটকি পল্লীগুলোতে প্রতিদিন সূর্যের আলোয় শতাধিক জায়গায় ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির ছোট-বড় মাছ শুকানো হচ্ছে। নভেম্বরের শুরুতে ছোট মাছের শুঁটকির চাহিদা বেশি থাকে। এক-দুই মাস পর শীত বাড়লে বড় মাছের শুঁটকির মৌসুম শুরু হবে। চট্টগ্রামের তিনটি বড় শুঁটকিপল্লী হলো ইছানগর, চরপাথরঘাটা ও উত্তর বাকলিয়ার ক্ষেতচর। 

ইছানগরের শুঁটকিপল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে, শুঁটকি শুকানোর কাজ কয়েকটি ধাপে করা হয়। প্রথমে, একদল শ্রমিক মাছের পেট কেটে নাড়ি-ভুঁড়ি বের করে। তারপর আরেক দল সেই মাছগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে। এরপর, কেউ কেউ ধোয়া মাছগুলো শুকানোর জন্য রোদে বিছিয়ে দেয়, আবার কেউ কেউ হালকা শুকানো মাছে লবণ মাখায়।

পরিশেষে, শুঁটকিগুলো চাঙে রেখে শুকানো হয়। শুঁটকির ধরন অনুযায়ী শুকাতে এক থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে।

শুঁটকি উৎপাদনের সাথে যুক্তরা জানিয়েছেন, এখানে কোনো ধরনের ফরমালিন বা ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। শুঁটকিগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা হয়।

ইছানগরের নদীর তীরে গড়ে ওঠা শুঁটকিপল্লীতে বাঁশের তৈরি চাঙে বড় বড় শুঁটকি শুকানো হচ্ছে। পাশে সারি সারি মাচানে ছোট ছোট নানা ধরনের মাছের শুঁটকি শুকানো হচ্ছে। এখানে অনেক শ্রমিক কাজ করছেন।

শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজারের অনেক শুঁটকিপল্লী বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, সেখানকার অনেক ব্যবসায়ী মাছ এনে এখানে শুকান। এই শুঁটকিপল্লী থেকে চট্টগ্রামের চাক্তাই, ঢাকা, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শুঁটকি সরবরাহ করা হয়। এমনকি, কিছু নামীদামি শুঁটকি বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। চরপাথরঘাটা ও বাকলিয়া এলাকাতেও একই রকম চিত্র দেখা গেছে। সর্বত্র জাল দিয়ে ঘেরা মাচান এবং চাঙে নানা জাতের শুঁটকি শুকাচ্ছেন শ্রমিকরা।

এখন যেসব মাছের শুঁটকি তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে আছে ছুরি, ফাঁইস্যা, লইট্টা, ইচা, মইল্যা, কেচকি, লাক্ষ্যা, কোরাল, রূপচাঁদা, পোয়া ও ছোট-বড় মিশালি জাতের শুঁটকি। শুঁটকির মধ্যে সবচেয়ে দামি লাক্ষ্যা ও রূপচাঁদা। এরপর রয়েছে ছুরি, লইট্যা ও নোনা ইলিশ। তবে এখানে লাক্ষ্যা কম হয়। একটু বড় আকারের শুঁটকির জন্য বাঁশ দিয়ে চাঙ সাজানো হয়। আর ছোট জাতের শুঁটকি শুকাতে তৈরি করা হয় মাচান। শুঁটকি উৎপাদনের কাজ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে চলে ৯ মাস। মার্চ পর্যন্ত বেশি শুঁটকি উৎপাদন হয়।

ইছানগরের শুঁটকিপল্লীর কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মৌসুমে বিক্রি হয় কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি। ফরমালিন ছাড়াই রোদে শুকিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে এখানে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। শুকানো শেষে পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন বাজারে। নদী তীরবর্তী হওয়ায় এখানে মাছ সংগ্রহ ও শুঁটকি বাজারজাত করা সহজসাধ্য। প্রায় শতাধিক মাচানে প্রতিদিন চলছে শুঁটকি শুকানোর কাজ। এসব মাচানে শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে। সাগর থেকে মাছ ধরে কর্ণফুলী নদীতে আসা ফিশিং জাহাজ থেকে সরাসরি মাচানে নিয়ে শুকানো হয়।ফলে শুঁটকির মান ও স্বাদ ভালো থাকে। এখানে শুঁটকি তৈরিতে খরচ তুলনামূলক কম। নদী ও সাগর থেকে আহরণ করা মাছ সহজে ও কম খরচে এখানে আনা যায়। এখানকার শুঁটকি নগরীর আছদগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়।

শুঁটকি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, শীতকালে শুঁটকির চাহিদা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। যেহেতু এখন শুঁটকি উৎপাদনের মৌসুম, তাই দাম তুলনামূলক কমচট্টগ্রামের শুঁটকি শুধু এই অঞ্চলেই নয়, সারা দেশেই বিক্রি হয়। শীতকালে শুঁটকির উৎপাদন এবং চাহিদা দুটোই বেশি থাকে।

তিনি আরও জানান, মাছ ধরে দ্রুত রোদে শুকানোর কারণে এখানকার শুঁটকির স্বাদ এবং গন্ধ অতুলনীয়। “অন্য এলাকার শুঁটকির চেয়ে আমাদের শুঁটকির ঘ্রাণ আলাদা, খেতেও বেশি সুস্বাদু।কর্ণফুলীর এই সুস্বাদু শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, হংকং, চীন ও তাইওয়ানে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

শুঁটকি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আছদগঞ্জে শুঁটকির ৪০টি আড়ত রয়েছে। ছোট-বড় দোকান রয়েছে ২৭০টির মতো। ওখানে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উৎপাদিত শুঁটকি আসে। প্রতি মৌসুমে চট্টগ্রামের এসব শুঁটকি আড়তে মাছের গুঁড়াসহ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি শুঁটকি আসে; যার বাজার মূল্য ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা।

লাক্ষ্যা ও রূপচাঁদা শুঁটকির দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বর্তমানে এক কেজি রূপচাঁদা শুঁটকি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা এবং লাক্ষ্যা ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য শুঁটকির মধ্যে, ছুরি শুঁটকি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি, লইট্যা শুঁটকি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা এবং ইচা শুঁটকি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!