রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৫, ১২:০৩ পিএম

আজ বিশ্ব বন্ধু দিবস, কীভাবে এলো এই দিন?

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৫, ১২:০৩ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

আজ বিশ্ব বন্ধু দিবস। আগস্টের প্রথম রোববার বিশ্বজুড়ে যে দিনটি উদ্‌যাপিত হয়, তার পেছনে আছে একটি আবেগময় ইতিহাস এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ।

আমাদের চারপাশে সম্পর্কের অনেক রকম রূপ থাকলেও বন্ধুত্ব এমন একটি অনুভব যা রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও হৃদয়ের বন্ধনে গড়ে ওঠে। এ বন্ধন গাঢ় হয় বিশ্বাসে, আত্মত্যাগে এবং নির্ভরতায়।

১৯৩৫ সালের এক হৃদয়বিদারক ঘটনাই আজকের এই ‘বন্ধু দিবস’-এর সূচনাবিন্দু। যুক্তরাষ্ট্রে সে সময় সরকারের হাতে একজন নিরীহ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পরদিন, তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। বন্ধুর এমন আত্মত্যাগে আবেগাপ্লুত হয়ে মার্কিন কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয়—এই আত্মিক সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিতে হবে। 

সেই থেকে আগস্টের প্রথম রোববারকে ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’ হিসেবে পালনের প্রথা চালু হয়। পরবর্তী কয়েক দশকে এই দিনটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর নানা দেশে। সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে উদ্‌যাপনের ধরন, যোগ হয়েছে নতুন নতুন প্রতীক ও রীতিনীতি, কিন্তু বন্ধুত্বের সেই চিরন্তন আকর্ষণ ও আবেদন আজও অম্লান।

বিশ্বের অনেক দেশেই এখন বন্ধুত্বের দিনে হলুদ গোলাপ ও ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের আদান-প্রদান এক সাধারণ সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হলুদ গোলাপের ব্যবহার এসেছে বন্ধুত্বের প্রতীকি রঙ হিসেবে। কারণ, হলুদ মানেই আলো, আনন্দ, আশাবাদ এবং নতুন জীবনের বার্তা। এটি একদিকে যেমন বন্ধুর প্রতি শুভকামনা জানানোর প্রতীক, তেমনই বন্ধনের এক সুন্দর ও সরল প্রকাশ। অন্যদিকে, বন্ধুর হাতে বাঁধা ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড এক গভীর প্রতিশ্রুতির কথা বলে—এই সম্পর্ক কখনোই ছিন্ন হবে না।

ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের ধারণাটিও আমেরিকান আদিবাসী সংস্কৃতি থেকে এসেছে। তাদের সমাজে একটি বিশেষ নিয়ম চালু ছিল—নিজের হাতে বানানো ব্যান্ড বন্ধুকে উপহার দেওয়া হতো, আর সেই ব্যান্ড পরা বন্ধুর দায়িত্ব ছিল তা কখনো খোলা না রাখা। একে তারা দেখতেন বন্ধুত্বের শপথ হিসেবে। সেই ঐতিহ্যই আজ বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। 

শহর থেকে গ্রাম, ছোট শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক—সবাইই এই দিনে প্রিয় বন্ধুকে ব্যান্ড উপহার দেয়। স্কুল-কলেজে তো এই দিনের আলাদা আমেজ থাকে। একে অন্যের হাতে ব্যান্ড বাঁধা, একে অন্যকে হলুদ গোলাপ দেওয়া কিংবা ফটো তুলেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার হিড়িক পড়ে যায়।

১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব বন্ধুত্বকে সম্মান জানাতে বিখ্যাত কার্টুন চরিত্র উইনি দ্য পুহ-কে বন্ধুত্বের বিশ্বদূত হিসেবে ঘোষণা দেয়। এই পুহ চরিত্রটি এমনিতেই বন্ধুত্বের উদাহরণ। সরলতা, আন্তরিকতা এবং অপরকে বোঝার ক্ষমতা নিয়ে সে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। ইউনাইটেড নেশনসের এই সিদ্ধান্ত ছিল এক অনবদ্য বার্তা—বন্ধুত্ব শুধু বাস্তব জীবনের কোনো সম্পর্ক নয়, এটি আমাদের কল্পনায়, সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে, এমনকি শিশুমনেও গভীরভাবে প্রোথিত।

বাংলাদেশেও বন্ধুত্ব দিবস বেশ কয়েক বছর ধরেই পালিত হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দিনটি ঘিরে থাকে উৎসবের আমেজ। সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্যাটাস থেকে শুরু করে, প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো পোস্ট করা, বন্ধুদের নিয়ে রেস্তোরাঁয় খাওয়া, স্মৃতিচারণ—সবই এই দিনের অংশ। স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে তো বন্ধুত্ব দিবস নিয়ে যেন বাড়তি উন্মাদনা। সকালে দেখা যায়, প্রত্যেকের হাতে একাধিক ব্যান্ড, কেউ কাউকে ফুল দিচ্ছে, কেউ আবার একে অন্যকে আলিঙ্গন করছে—এই উষ্ণতা, ভালোবাসা আর নির্ভরতার প্রকাশটাই এই দিবসের সবচেয়ে বড় সারাংশ।

বন্ধু মানেই পাশে থাকা, বিনিময়ে কিছু চাওয়া নয়। বন্ধু মানেই এমন একজন, যার সঙ্গে নিজের সবচেয়ে গোপন কষ্ট শেয়ার করা যায়। যে তোমার হাসির কারণ হতে পারে, আবার চোখের পানিও মুছিয়ে দিতে পারে। বন্ধুত্বের সম্পর্কটিকে তাই পরিবার, প্রেম কিংবা সামাজিক পরিচয়ের বাইরে এক অনন্য মর্যাদা দেওয়া হয়। কেউ কেউ বলেন, একজন প্রকৃত বন্ধু মানেই এক অদৃশ্য আত্মার অংশ, যাকে হারানো যায় না, ভুলে যাওয়া যায় না, বরং সময়ের সঙ্গে তার প্রয়োজন আরও গভীর হয়।

সমাজে অনেক সম্পর্কই দায়বদ্ধতার, দায়িত্বের। কিন্তু বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে একান্তই ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের জায়গা থেকে। সেখানে থাকে না কোনো শর্ত, চুক্তি বা বাধ্যবাধকতা। বন্ধুত্ব মানেই হলো মানুষ হয়ে ওঠা, মানুষের পাশে থাকা, একে অন্যের সুখে-দুঃখে থাকা। একজন ভালো বন্ধু জীবন গঠনের ক্ষেত্রে যেমন সহায়ক হতে পারে, তেমনি কঠিন সময়েও হয়ে ওঠে ভরসার স্থল।

বন্ধু দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—বন্ধুদের জন্য আমাদের জীবনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাও জরুরি। আজকের দিনটি সেই উপলক্ষ। খুব সাধারণ একটি বার্তায়, একটি ফোন কলে, কিংবা একটি ছোট উপহারেই বলা যায়, ‘তুই আছিস বলেই জীবনটা সহজ মনে হয়।’ হয়তো বন্ধু জানেই না, তার উপস্থিতি তোমার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আজকের দিনটি সেই কথা জানানোর দিন।

এই বন্ধু দিবসে, আমরা যদি একটু গভীরভাবে ভাবি, তাহলে বুঝতে পারব—বন্ধুত্বের চর্চা শুধু বন্ধুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই পৃথিবীতে শান্তি, সহনশীলতা ও মানবিকতা ছড়াতে হলে, সমাজের ভেতরেও বন্ধুত্বের মনোভাব ছড়িয়ে দিতে হবে। একে অন্যের মতের প্রতি সম্মান, আলাদা অবস্থান মেনে নেওয়া, পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা—এই সবই বন্ধুত্বের প্রকাশ। তাই বন্ধুত্ব দিবস কেবল এক দিনের আনন্দ নয়, এটি একটি মূল্যবোধ, যা গোটা সমাজে চর্চিত হওয়া দরকার।

আজ বিশ্ব বন্ধু দিবস। এই দিনটিকে শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে সীমাবদ্ধ না রেখে, একজন বন্ধুর কাছে গিয়ে তার হাতটি শক্ত করে ধরুন, কিংবা পুরোনো কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটান। মনে রাখুন, একজন ভালো বন্ধু পাওয়া যেমন সৌভাগ্যের বিষয়, তেমনি বন্ধুত্ব ধরে রাখার জন্যও দরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা, সহানুভূতি আর শ্রদ্ধা।

বন্ধুত্ব এক স্বতঃস্ফূর্ত সম্পর্ক—যেখানে প্রতিদান চাওয়া হয় না, শুধু দেওয়া হয় ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসারই আজকের দিন, বিশ্ব বন্ধু দিবস।

Shera Lather
Link copied!