শনিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ১২:০২ এএম

হৃদরোগে অপ্রতিরোধ্য মুইদ-রেজার জোট

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ১২:০২ এএম

হৃদরোগে অপ্রতিরোধ্য  মুইদ-রেজার জোট

  • অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে ডা. একরামুল রেজা টিপুকে ২১ জুলাই ঝিনাইদহে বদলি করা হলেও মাত্র সাত দিন পরই বদলির আদেশ বাতিল করান
  • নিজ কক্ষে রোগী না দেখে হাসপাতালের সামনে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত প্রাইভেট চেম্বার চালান ডা. একরামুল
  • ডা. একরামুলের অন্যতম দোসর ডা. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ
  • নিয়মবহির্ভূতভাবে ৮টি মেশিন গ্রহণ করে ডা. মুয়ীদকে সরিয়ে দেওয়া হয় দায়িত্ব থেকে
  • দায়িত্ব থেকে সরানো হলেও প্যাথলজি বিভাগের প্রধানের রুম দখল করে আছেন ডা. মুয়ীদ

দেশের হৃদরোগীদের চিকিৎসার অন্যতম ভরসাস্থল জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু হাসপাতালের গুটিকয়েক চিকিৎসকের হাতে জিম্মি এর চিকিৎসাসেবা। একের পর এক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, দখলদারি ও অবৈধ কর্মকা-ের অভিযোগে এর আগে থেকেই রয়েছে সমালোচনা। এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দুই চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ খান এবং আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) ডা. একরামুল রেজা টিপু। হাসপাতালের অভ্যন্তরে এ দুই চিকিৎসকের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সহকর্মীরা।

অপ্রতিরোধ্য ডা. একরামুল রেজা টিপু: ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যোগ দেন ডা. একরামুল রেজা টিপু। এরপর একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর হাসপাতালের পরিচালকের স্বাক্ষরে তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) নিয়োগ দেওয়া হয়। এ দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন বেপরোয়া।

সহকর্মী চিকিৎসক, নার্স, স্টাফÑ এমনকি রোগীদের সঙ্গেও তার দুর্ব্যবহার এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এক ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে তাকে গত ২১ জুলাই ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। তবে যোগদান না করে তদবিরের মাধ্যমে মাত্র সাত দিন পরই তিনি বদলির আদেশটি বাতিল করান।

হাসপাতালের বহির্বিভাগের ১০১ নম্বর কক্ষে তার অফিস থাকলেও রোগী দেখেন না বললেই চলে। রোগীদের সেবা দেন অন্য মেডিকেল অফিসার। অথচ ডা. একরামুল রেজা ব্যস্ত থাকেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেনদরবারে।

জানা গেছে, হাসপাতালের সামনেই অবস্থিত একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিনি নিয়মিত প্রাইভেট চেম্বার চালান। প্রতিদিন সকালে তার পিয়ন সবুজ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এসে রোগী ভাগিয়ে ওই চেম্বারে নিয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, চিকিৎসক একরামুল রেজা নানা অনুষ্ঠানের নামে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন। স্ত্রী-সন্তানসহ বিদেশ ভ্রমণের খরচও তাদের বহন করতে হয়।

অবৈধ কক্ষ দখলের অভিযোগ: সম্প্রতি হাসপাতালের এনাটমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আসাদ হোসেন অবসর নেওয়ার পর দক্ষিণ ব্লকের ২৪৫ নম্বর কক্ষটি খালি হয়। অভিযোগ আছে, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই সেই কক্ষ দখল করে নিয়েছেন ডা. একরামুল রেজা। অথচ তার নামে বরাদ্দ রয়েছে বহির্বিভাগের ১০১ নম্বর কক্ষ। কিন্তু নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. একরামুল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি এখানে আবাসিক চিকিৎসক। আমি আমার কাজটাই করি। বাকি যা আপনার মন চায় লিখতে পারেন।’

সহযোগী ডা. মুয়ীদ: ডা. একরামুলের অন্যতম দোসর হিসেবে পরিচিত মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ খান। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের কারণে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিলেও প্যাথলজি বিভাগের প্রধানের রুম দখল করে আছেন তিনি।

ডা. একরামুলের অপকর্মে যতভাবে পাশে থাকা যায় তা তিনি পালন করেন নিষ্ঠার সঙ্গেই। এসব বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে স্পষ্টভাবে তিনি বলেন, ‘আমি আর ওই দায়িত্বে নেই। তাই এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্যও নেই।’

ডা. মুয়ীদ বা ডা. একরামুল দুজনকেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ওয়াদুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ওই দুই চিকিৎসকের দক্ষতা নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। ওরা ওদের কাজের ক্ষেত্রে শতভাগ সৎ। কিন্তু কিছু নির্বুদ্ধিতার কারণে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছি আমরা।’

‘অনুদানের আট মেশিন’ নিয়ে বিতর্ক: এর আগে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের নাম জড়িয়েছিল অননুমোদিত মেশিন গ্রহণ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অমান্যের ঘটনায়। এবার সেই তালিকায় যোগ হয়েছে ‘অনুদানের আট মেশিন’। ২০২৫ সালের আগস্টে তৎকালীন প্যাথলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ডা. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ খান নিয়মবহির্ভূতভাবে ৮টি মেশিন গ্রহণ করেন। পরে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

তবে অভিযোগ, এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন আবাসিক চিকিৎসক ডা. একরামুল রেজা টিপু। কারণ, মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবিসি করপোরেশনের বিপণন কর্মকর্তা আহসানুল রেজা হচ্ছেন ডা. একরামুল রেজার আপন ভাই। পারিবারিক সম্পর্কের সুবাদে এই দুই চিকিৎসক হাসপাতালের সরবরাহ ও রিএজেন্ট ব্যবসায় অস্বচ্ছ প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল প্রশাসন এখন এই মেশিনগুলো নিয়ে বিব্রত অবস্থায়Ñ গ্রহণ করলে নতুন অনিয়মের অভিযোগ আর না নিলে ‘উচ্চমহলের’ অসন্তুষ্টি।

দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরব প্রশাসন: হাসপাতালের প্রশাসন এ বিষয়ে জানার পরপরই তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দাবি করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, মুইদ-রেজা জুটি এখন কার্যত হাসপাতালে রাজত্ব করছে এমন সংবাদ আমাদের কাছে আসার পরপরই তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেশিনগুলো যারা দিয়েছে, সেগুলো এখনো ইনটেক রয়ে গেছে। কিন্তু তারা কেন এর প্রয়োজনীয়তা যাচাই না করেই গ্রহণ করেছে, এ জন্য আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছি। হাসপাতালের কল্যাণে যা যা করা প্রয়োজন, আমরা সব করব। কিন্তু আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেগুলো একদিনেই সমাধান সম্ভব নয়। সেটা আপনারাও জানেন। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখানে যারা নিয়ম মেনে কাজ করতে চান, তারা অপমানিত হচ্ছেন। কিন্তু অনিয়মকারীরা পুরস্কৃত হচ্ছে। হাসপাতাল প্রশাসন যেন পঙ্গু।’

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সুনাম ও রোগীসেবা যেখানে মূল লক্ষ্য হওয়ার কথা, সেখানে অনিয়ম, ক্ষমতার দাপট আর অস্বচ্ছ আর্থিক লেনদেনই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রশ্ন উঠেছেÑ হৃদরোগে মুইদ-রেজার রাজত্বের অভিযোগ কানে গিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গেই পরিচালককে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তিনি ব্যবস্থাও নিয়েছেন। এখন যদি আর কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে অধিদপ্তর সরাসরি তদন্ত করবে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!