- বর্তমানে চীনে অন্তত ২০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন
- চীনে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান অষ্টম
- প্রতিবছর তিন হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে চীন যাচ্ছেন
- চীনে ৩ হাজারের বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে ৬০টিরও বেশি র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচশর মধ্যে
- লক্ষাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা শেষে দেশে কিংবা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন
- ১৯৮১ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত প্রায় ৪৫০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ‘চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছেন
- ক্স ইউরোপ-আমেরিকা, এমনকি বাংলাদেশের তুলনায় চীনে লেখাপড়ার খরচ কম বিধায় বাড়ছে আগ্রহ
- ক্স বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ডরমেটরি
- ক্স ভিসা প্রক্রিয়া সহজ এবং পড়াশোনা শেষে ভালো বেতনে আছে চাকরির সুযোগ
কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর উচ্চশিক্ষার জন্য কোথায় যাবেন তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন রোহা বিন মেজবাহ। শেষমেশ ইউরোপ-আমেরিকাসহ দেশের বাইরে থাকা আত্মীয়-স্বজনের পরামর্শে পূর্ণাঙ্গ স্কলারশিপ নিয়ে ২০২০ সালে ভর্তি হন চীনের ইয়াংজৌ ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে গ্র্যাজুয়েশন শেষে তিনি বতর্মানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ইউনিভার্সিটি অব চায়নাতে মাস্টার্স করছেন।
মেজবাহ বললেন, ‘আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে টেকনোলজিতে চীনের অবস্থান শীর্ষে। বিষয়টি আমি কাছ থেকেই দেখছি। গবেষণাসহ অন্যান্য সুবিধা এবং ল্যাবের ক্যাপাসিটি বিশ্বের যে ভালো দেশের সঙ্গে তুলনা করলে শীর্ষের দিকেই থাকবে। এখন আমার মনে হয়Ñ পড়াশোনার জন্য ইউরোপ-আমেরিকায় না গিয়ে এখানে এসে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
একই কথা জানালেন নড়াইলের এ ডি শুভ্র নামের আরেক শিক্ষার্থী। তিনি ২০২২ সালে চীন সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রামে পড়াশোনা করতে দেশটিতে যান। সেখানে মাস্টার্স শেষে এক বছর চাকরি করার পর এখন তিয়ানজিন ইউনিভার্সিটিতে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর তিনি পিএইচডি করছেন। শুভ্র বলেন, চীনের পড়াশোনার মান অনেক উন্নত। বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করলে যোজন-যোজন তফাত। এখানে একজন শিক্ষার্থী শুধু পড়তেই আসে। পড়াশোনার বাইরে অন্য কিছু করার সুযোগ নেই। শিক্ষকরা ক্লাস নিতে কোনো ফাঁকি দেন না। তাদের ল্যাব ও গবেষণা সুবিধাও অনেক উন্নত।
যে কারণে চীনে পড়ার আগ্রহ
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং সংস্থা এবং চীনে পড়াশোনা করা অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চীনে তিন হাজারেরও বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচশর মধ্যে অবস্থান করছে। বিশেষ করে সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়, ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়, ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় ও সাংহাই জিয়াওতং বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেছে।
ইউনেসকো-চীন গ্রেটওয়াল কো-স্পন্সরড ফেলোশিপ, চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ, চীনের প্রাদেশিক প্রশাসন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ সুবিধার কারণে বাংলাদেশিসহ বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে উচ্চশিক্ষার জন্য চীন আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছে। বর্তমানে দেশটিতে অন্তত ২০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসা, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যবসায় প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কÑ প্রায় সব ক্ষেত্রেই চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন বিশ্বমানে জায়গা করে নিয়েছে। শিক্ষার মান, আধুনিক গবেষণাগার, বৃত্তির সুযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের পরিবেশ চীনকে শিক্ষার্থীদের কাছে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
চীনের বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্য মতে, ১৯৮১ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনের মর্যাদাপূর্ণ সরকারি বৃত্তি ‘চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (সিজিএস) নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। সর্বশেষ ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে’ এই বৃত্তি পেয়েছেন বাংলাদেশের ৮০ জন। এর বাইরে অন্যান্য বৃত্তি নিয়ে আরও কয়েকশ শিক্ষার্থী এ বছর চীনে পড়াশোনা করতে গিয়েছেন। ইতিমধ্যে লক্ষাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে কিংবা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গবেষণা, প্রযুক্তি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, চীনে পড়াশোনা করতে যাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান অষ্টম। প্রতিবছর দেশটিতে তিন হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বৃত্তি ও বৃত্তির বাইরে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন।
তাদের একজন ফেনীর সাদ বিন ইসলাম। তিনি চীনের সাউথওয়েস্ট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিবিএস পাস করে দেশে ফিরে একটি হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন। সাদ বিন ইসলাম বলেন, ওয়েস্টার্ন মেডিসিন বা এমবিবিএস পড়া বিশ্বের সব দেশেই এক রকম। তবে চীনে পড়াশোনা করতে গিয়ে মাল্টিডিসিপ্লিনারি পরিবেশ পেয়েছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০ হাজার শিক্ষার্থী ছিল। বিশাল সুন্দর ক্যাম্পাস। ল্যাব ও গবেষণাসামগ্রী অনেক আধুনিক। আমাদের দেশের মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে ঠেলাঠেলি করে একটা ক্যাডাভার (লাশ) অ্যানাটমি পর্যালোচনার সুযোগ পায়। কিন্তু চীনে পর্যলোচনার জন্য চারজন শিক্ষার্থীকে একটি ডেডবডি দেওয়া হয়। আবার বাংলাদেশে এক মাইক্রোস্কোপ দিয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে হয়। চীনে ল্যাবের ভেতরে একজন শিক্ষার্থীকে একটি করে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়Ñ স্লাইড নিয়ে গবেষণা করো। এভাবে নানা ক্লাস ও পরীক্ষা এবং ট্রেনিং হাতে-কলমে নেওয়া হয়। যা বাংলাদেশে একেবারেই অসম্ভব।
বাংলাদেশ-চায়না ইয়ুথ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নর্থ চায়না ইলেকট্রিক পাওয়ার ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক জান্নাতুল আরিফ বলেন, চীনে আমার শিক্ষাজীবন শুধু একটি একাডেমিক অধ্যায় নয়, বরং জীবনবদলের একটি অভিজ্ঞতা। এখানে আমি শিখেছি কীভাবে কঠোর পরিশ্রম, নিয়মশৃঙ্খলা এবং গবেষণার প্রতি নিবেদন একজন মানুষকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে। যারা উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার স্বপ্ন দেখেন, তাদের জন্য চীন হতে পারে এক অনন্য গন্তব্য।
খরচ কম হওয়ায় বাড়ছে আগ্রহ
চীনে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন বৃত্তি নিয়ে সেখানে যান বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ-চীন ইয়ুথ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। বৃত্তির আওতায় টিউশন ফি, আবাসন, মাসিক ভাতা ও স্বাস্থ্যবিমাসহ তারা সম্পূর্ণ সহায়তা পান। চীনে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা জানান, বৃত্তি ছাড়া পড়তে গেলে ব্যাচেলর প্রোগ্রামে খরচ হয় ৩ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা। মাস্টার্স কোর্সগুলোতে ৪ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা। যা ইউরোপ বা আমেরিকার চেয়ে অনেক কম। এ ছাড়া দেশটিতে মেডিকেল নিয়ে পড়তে যে খরচ হয় তা-ও বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কম বলে জানান তারা।
বৃত্তির আবেদন ও ভিসা প্রক্রিয়াও অনেক সহজ। ইউরোপ-আমেরিকার মতো ভিসাপ্রাপ্তির জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয় না। আইএলটিএস থাকলে কিংবা ও আইএলটিএস না থাকলে চাইনিজ ভাষার পরীক্ষা (এইচএসকে) দিয়ে বৃত্তির জন্য আবেদন করা যায়।
রোহা বিন মেজবাহ বলেন, ‘আমার আবেদন করতে খরচ হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। আর আসার জন্য বিমানের টিকিট কিনতে ব্যয় করতে হয়েছিল ৫০ হাজার টাকা। বৃত্তি নিয়ে আসায় এর বাইরে আমার কোনো খরচ হয়নি। এখানে যে বৃত্তি পাই তা দিয়ে ভালোভাবেই থাকতে পারি। জীবনযাত্রার খরচও বাংলাদেশ থেকে অনেক কম।’
বৃত্তির বাইরেও নিজ খরচে অনেক শিক্ষার্থী চীনে পড়তে যাচ্ছেন। তুলনামূলকভাবে চীনের টিউশন ফি ও জীবনযাত্রার ব্যয় কম হওয়ায় খরচ নিয়ে তাদের খুব বেশি চাপে পড়তে হয় না। এ ডি শুভ্র বলেন, চীনে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবাসনের সংকট নেই। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়েই ইন্টারন্যাশনাল ডরমেটরি রয়েছে।
পড়াশোনা শেষে চাকরির সুযোগ অনেক
পড়াশোনার পাশাপাশি চীনে চাকরির কোনো বৈধ সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা। তবে পড়াশোনা শেষে আকর্ষণীয় চাকরির অনেক সুযোগ রয়েছে। নিয়মিত বিভিন্ন প্রদেশ ও ইউনিভার্সিটিতে চাকরির মেলা হয়। যোগ্যতা থাকলেই চাকরির জন্য আবেদন করা যায়।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, চাইনিজ স্ট্যুন্টেন্ড ল অনুযায়ী পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করা যায় না। কারণ এখানে পড়াশোনা করতে আসা অধিকাংশই চাইনিজ গভর্নমেন্ট ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ নিয়ে আসেন। স্কলারশিপ নিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা টিউশিন ফি, আবাসন সুবিধাসহ প্রায় ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার টাকার মতো বৃত্তি পান। তাই গ্র্যাজুয়েশন, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি করতে আসা শিক্ষার্থীদের চাকরির করতে হয় না। স্কলারশিপের শর্ত অনুযায়ীও চাকরি করা নিষেধ। আর বৃত্তি ছাড়া পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নানা ছাড় পান।
এ ডি শুভ্র জানান, চীনের জীবনযাত্রার খরচ বাংলাদেশ থেকে কম। তারা যে বৃত্তি দেয় সেটা পর্যাপ্ত। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করার প্রয়োজন হয় না। পড়াশোনা শেষে চাকরির অনেক সুযোগ আছে। চাইনিজ ভাষা ও যোগাযোগের দক্ষতা থাকলে সহজে চাকরি মেলে। ব্যাচেলর শেষ করলে ১ লাখ টাকার মধ্যে, মাস্টার্স শেষ করলে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা বেতনের চাকরি পাওয়া যায়। পিএইচডি শেষ করলে দেড় লাখ থেকে তিন লাখ টাকারও বেশি বেতনের চাকরি পাওয়া যায় বলে জানান শিক্ষার্থীরা। তবে পড়াশোনা চলাকালে ক্যাম্পাসের ভেতরে বিশ^বিদ্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
চীনের পড়াশোনার জন্য চীনা ভাষা শেখা বাধ্যতামূলকও নয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, চীনে পড়াশোনা হয় মূলত দুটি ভার্সনে। একটি চীনা অন্যটি ইংরেজি ভার্সন। ডিপ্লোমা কোর্স সাধারণত চাইনিজে পড়ানো হয়। অনার্স, মাস্টার্স, পিএইচডি চাইনিজ কিংবা ইংলিশে পড়া যায়। তবে কমিউনিকেশনের জন্য চাইনিজ শিখতে হয়।
ঢাকার মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ২০১৯ সালে চীনের সিচুয়ান প্রদেশের সাউথওয়েস্ট পেট্রোলিয়াম ইউনিভার্সিটিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি করতে যান মুহাম্মাদ মারুফ বিল্লাহ। তিনি ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর ২০২৩ সালে চীনের ন্যানজিং শহরে অবস্থিত ন্যানজিং ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করে বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত আছেন। মারুফ বিল্লাহ বলেন, চীনে পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন খাতে চাকরি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশেষত, টেকনোলজি ও ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে যেমনÑ এআই, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডেটা সায়েন্স এবং সাইবার সিকিউরিটির মতো ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির সুযোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া, বিজনেস সেক্টরে যেমন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের সুযোগ আরও বিস্তৃত হচ্ছে। একইভাবে ইংরেজিতে শিক্ষকতা, আন্তর্জাতিক স্কুলে শিক্ষকতাসহ অন্যান্য শিক্ষা ক্ষেত্রেও চাকরির সুযোগ রয়েছে।
দিদারুল আলম নামে আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা শেষ করে সোরোটেক সোলার এনার্জি স্টোরেজে প্রায় দেড় লাখ টাকা বেতনে চাকরি করছেন। তিনি বলেন, ব্যালেচর শেষ করে কেউ যদি দুই বছর চাকরি করে তাহলে রেসিডেন্সিয়াল হিসেবে কাউন্ট হয়। পড়াশোনা শেষে যে প্রদেশের চাকরি হবে ওই প্রদেশের লোকাল গভর্নমেন্টে অফিসে গিয়ে স্টুডেন্ট ভিসা থেকে ওয়ার্ক ভিসায় কনভার্ট হওয়া যায়। এখানে একজন শিক্ষানবিস চাকরিতে যোগদান করলেই লাখ টাকার মতো বেতন পায়।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-চায়না অ্যালামনাইয়ের (এবিসিএ) সাধারণ সম্পাদক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাবুল হক বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য দিন দিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দুয়ার সংকুচিত হচ্ছে। আবার এসব দেশে পড়তে গেলে অনেক টাকা খরচ হয়। এর বিপরীত চিত্র চীনে। এখানে স্কলারশিপ নিয়ে বিনা খরচে পড়ার সুযোগ অনেক। পড়াশোনার মান, ল্যাব ও গবেষণা সুবিধা খুবই উন্নত মানের। আবার বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচারের সঙ্গে তাদের মিল রয়েছে। চীনে পড়তে যাওয়ার ভিসা প্রক্রিয়াও অনেক সহজ, পড়াশোনা শেষে ভালো বেতনে চাকরির সুযোগ থাকায় চীন আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছে।
বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চীন তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিকায়ন আনছে। বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়নে চীন অনেক আন্তরিক। যারা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যারা, তারা চীনকে অগ্রাধিকার দিতে পারে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফর করেছেন। সফর শেষে তার বিশেষ সহকারী ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বর্তমানে চীনে পড়াশোনা করছেন। যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন