আমরা যারা ভ্রমণপিপাসু, তাদের জন্য সারা বছরই ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। কিন্তু শৌখিন পর্যটকদের কাছে শীতকাল যেন ভ্রমণের সেরা মৌসুম। গ্রীষ্মের তীব্র রোদ বা বর্ষার কাদা-ভেজা পথের ঝামেলা পেরিয়ে শীতের নরম রোদ, হালকা কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাস যেন ভ্রমণকে করে তোলে আরও উপভোগ্য। এ সময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভিন্ন রূপ চোখে পড়ে। সবুজে মোড়া পাহাড়ে কুয়াশার আস্তরণ, নদীর জলে ভেসে চলা সূর্যের আলোর প্রতিফলন, কিংবা সমুদ্রের নীল ঢেউয়ের মাঝে সূর্যাস্তের লাল আভা মিলিয়ে শীতকাল যেন প্রকৃতি ভ্রমণপ্রেমীদের ডাকে নরম স্বরে। তবে ভ্রমণ উপভোগ্য করতে হলে প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতির। অনেক সময় আমরা হঠাৎ করেই ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেই, কিন্তু প্রস্তুতি না থাকলে সেই আনন্দ ভোগান্তিতে পরিণত হয়। তাই শীতকালের ভ্রমণের আগে খেয়াল রাখুন কিছু জরুরি বিষয়।
গন্তব্য নির্ধারণ
শীতকালে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশে রয়েছে অসংখ্য মনোমুগ্ধকর স্থান। পাহাড়প্রেমীদের জন্য বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি অসাধারণ। যারা সমুদ্র ভালোবাসেন, তাদের জন্য কক্সবাজার, কুয়াকাটা বা সেন্ট মার্টিন হতে পারে আদর্শ গন্তব্য। আবার যারা ঐতিহ্য ও ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী, তারা যেতে পারেন মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বা ময়নামতিতে। শীতের সময়ে উত্তরবঙ্গের হিমেল হাওয়া, মেঘনায় সূর্যোদয় দেখা কিংবা সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী দর্শন, সবই শীতের বিশেষ আনন্দ। তবে গন্তব্য নির্ধারণের আগে ভ্রমণসঙ্গীদের পছন্দ, বাজেট ও সময় বিবেচনা করা উচিত।
প্রয়োজনীয় সামগ্রী
শীতকালের ভ্রমণে পোশাকের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জায়গাভেদে ঠান্ডার তীব্রতা ভিন্ন হতে পারে। পাহাড়ি এলাকায় রাতে তাপমাত্রা অনেক নেমে যায়, তাই হালকা জ্যাকেট, সোয়েটার, মাফলার, টুপি এবং মোজা সঙ্গে রাখা আবশ্যক। এ ছাড়া আরামদায়ক জুতা নিতে ভুলবেন না, কারণ অনেক সময় হাঁটতে বা ট্রেকিং করতে হতে পারে। যাত্রাপথে হালকা ওজনের ব্যাগ নিলে চলাফেরা সহজ হয়। অতিরিক্তভাবে, সানস্ক্রিন, লিপবাম, ময়েশ্চারাইজার, সানগ্লাস, ফার্স্ট এইড বক্স, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ট্রাভেল ডকুমেন্টস সঙ্গে রাখা ভালো। অনেক সময় ঠান্ডা ও ধুলাবালিতে গলা বা ত্বকের সমস্যা হতে পারে, তাই এগুলো আগে থেকে প্রস্তুত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা
শীতকালে পর্যটন মৌসুমে প্রায় সব জায়গাতেই ভিড় থাকে। তাই আগে থেকেই ট্রেন, বাস বা বিমান টিকিট কনফার্ম করা উচিত। হোটেল বা রিসোর্ট বুকিংও আগেই করে রাখা ভালো, বিশেষ করে কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন বা বান্দরবানের মতো জনপ্রিয় গন্তব্যে গেলে। অনেকে এখন অনলাইনে বুকিং করতে পছন্দ করেন, এতে সময় ও ঝামেলা দুটোই কমে। থাকার জায়গা বাছাইয়ের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা ও লোকেশনের বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
স্বাস্থ্য সচেতনতা
ভ্রমণের আনন্দ অনেকটাই নির্ভর করে স্বাস্থ্য ভালো থাকার ওপর। অনেক সময় অপরিচিত জায়গার খাবার বা পানি খাওয়ার কারণে পেটের সমস্যা দেখা দেয়। তাই চেষ্টা করুন নিজের সঙ্গে কিছু শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ রাখার। রাস্তার খাবার খেলে সেগুলো যেন গরম ও পরিষ্কার থাকে তা নিশ্চিত করুন। শীতকালে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পানি পান করুন। আর হঠাৎ ঠান্ডা লেগে না যায় সে জন্য গরম কাপড় পরিধান করুন এবং রাতে ঘুমানোর সময় ভালোভাবে মোড়ানো থাকুন।
নিরাপত্তা-সচেতনতা
ভ্রমণের সময় শুধু আনন্দ উপভোগ করলেই হবে না, প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতিও দায়িত্ববান হতে হবে। কোথাও ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না, প্লাস্টিক বর্জন করুন, স্থানীয় সংস্কৃতি ও রীতিনীতি সম্মান করুন। স্থানীয় ব্যবসায়ী বা কারিগরদের পণ্য কিনে তাদের সহায়তা করুন। মনে রাখবেন, টেকসই ভ্রমণ মানেই প্রকৃতিকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যতের জন্য সুন্দর পৃথিবী রেখে যাওয়া। এ ছাড়া শীতের ভ্রমণে হালকা কুয়াশা, ভোরবেলার ঠান্ডা বা পাহাড়ি পথে অন্ধকারে চলাফেরার ঝুঁকি থাকে। তাই ভ্রমণকালে নিজের ও দলের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে রাখতে হবে। রাতে অপরিচিত জায়গায় একা বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন, স্থানীয় গাইডের পরামর্শ নিন এবং জরুরি যোগাযোগ নম্বর সঙ্গে রাখুন। যাত্রাপথে মোবাইল চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংক রাখাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন