মুন্সীগঞ্জে আলোচিত জেলা যুব দলের যুগ্ম আহ্বায়র আবু ইলিয়াস শান্ত সরকারের মৃত্যুর ময়নাতদন্ত (পোস্টমর্টেম) রিপোর্ট হাতে পেয়েছে পুলিশ। সেখানে শান্তর মারা যাওয়ার বিষয়টি সড়ক দুর্ঘটনার হিসেবে বলা হয়েছে। এমনটাই জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাদ্দাম মোল্লা।
তিনি বলেন, গত বুধবার মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ইলিয়াস শান্ত সরকারের মৃত্যুর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। ওই প্রতিবেদনে শান্ত সরকারের মৃত্যুজনিত কারণগুলো সড়ক দুর্ঘটনার কারণ বলে জানানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই হত্যা মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। তবে শান্তর পরিবার এই মামলাটি পিবিআই ও সিআইডি`র কাছে হস্তান্তর বিষয়ে আবেদন করেন। দুই-একদিনের মধ্যে এই মামলাটি পিবিআই ও সিআইডি`র কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গেলো পহেলা নভেম্বর সন্ধ্যায় স্ত্রী ফাতেমার কাছে কাজের কথা বলে বেড় হন জেলা যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ইলিয়াস শান্ত সরকার। পরে রাত সাড়ে ৭টার দিকে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন আহম্মেদর জন্মদিনে অংশ নেন তিনি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সোনারগাঁও উপজেলার চর হোগলা গ্রামের শাহাদাৎ প্রধানের কাছে তার স্প্রিডবোট পাঠান। সেখান থেকে শান্ত সরকারের স্পিডবোটে উঠে শাহাদাৎ। পরে মুক্তারপুর ফেরিঘাট থেকে উঠে শান্ত। তখন শান্তের স্পিডবোটে ছিলেন শান্তসহ শাহদাৎ তার বাতিজা সাইফুল, মতলব উত্তরের শামীম ও স্পিডবোট চালক টিপু। তাদের উদ্দেশ্য ঢাকার সদরঘাট। শামীমের ফোন পেয়ে সদরঘাটে আসেন গোলাম কিবরিয়া মিঝি। তখন মিঝির সাথে ছিলো আরো তিনজন। তাদের সকলের উদ্দেশ্য মুন্সীগঞ্জের কালিরচর বালু মহাল। রাত সাড়ে ৯টায় কালিরচরে যাওয়ার সময় মোহনপুর থেকে আসা একটি মাছ ধরার ট্রলার কোনো কিছু বুঝার আগে শান্তর স্পিডবোটের বাম সাইডে দিয়ে উঠিয়ে দেয়। তখন শান্ত সরকার, শামীম, শাহাদাৎ ও গোলাম কিবরিয়া মিঝি স্পিডবোটের দেওয়ানির নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়। তার কিছুক্ষণ পর আহত অবস্থায় কিবরিয়া মিঝি ফোন দিয়ে সংঘর্ষের কথা জানালে কয়েকজন লোক এসে তাদের উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদের অবস্থায় আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর ঢাকার একটি হাসপাতালে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ইলিয়াস শান্ত সরকারের মৃত্যু হয়।
এদিকে এই ঘটনার পাঁচদিন পর নিহতর ভাই মামুন সরকার বাদি হয়ে ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়া পাঁচজনসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে ঘটনা নদীতে হলেও স্থলভাগে ঘটনা দেখিয়ে মামলা নেন মুন্সীগঞ্জ সদর থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মো. খলিলুর রহমান। এদিকে মামলার প্রধান আসামী শান্তর স্পিডবোট চালক ছাড়া বাকি সাতজন আসামি উচ্চ আদালত থেকে গত ১০ ডিসেম্বর ৪২ দিনের আগাম জামিন নিয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় আহতদের পক্ষ থেকে আরেকটি মামলা করা হয় মাছ ধরা ট্রলার চালক সহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। তবে এই দুই মামলায় কোনো আসামিকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
তবে হত্যা মামলার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এক মাসে এত তাড়াতাড়ি বের হওয়াটাও একটা রহস্য সৃষ্টি করে।
আপনার মতামত লিখুন :