বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: মে ১, ২০২৫, ০৫:১৩ এএম

‘লন্ডন মিশনে’ সফল কি আরিফুল হক চৌধুরী

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: মে ১, ২০২৫, ০৫:১৩ এএম

‘লন্ডন মিশনে’ সফল কি আরিফুল হক চৌধুরী

ছবিঃ রূপালী বাংলাদেশ

ফিরতি ফ্লাইট ১০ মে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে। লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেট। এই ফ্লাইটেই আসার কথা সিলেটের সাবেক একাধিকবার নির্বাচিত জননন্দিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। লন্ডন মিশন ছিল মাত্র ২ সপ্তাহের। কিন্তু ফিরছেন সফর সংক্ষিপ্ত করে। মাত্র ৭ দিনের মাথায়। তবে খালি হাতে নয়। লন্ডন মিশন সফল হওয়ায় আগেভাগেই ফিরছেন দেশে। এমনটাই নিশ্চিত করেছেন তার কাছের জনেরা।

বলেছেন, দুটি সুখবর দিতে তিনি সময়ের আগে দেশে চলে আসছেন। তবে তারা বলতে নারাজ, কোন দুটি সুখবর নিয়ে ফিরছেন তিনি।
 
অবশ্য তারই কাছের একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের পক্ষে তাকে সিলেট সিটি করপোরেশনের ‘প্রশাসক’ হতে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে এবং একই সাথে দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সিলেট সদর-সিটি কর্পোরেশন এলাকা) ও মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) এই দুটি সংসদীয় আসনে প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে আলোচনা করতে তিনি লন্ডন গিয়েছেন। তারেক রহমানই তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন সেখানে।

গত রোববার লন্ডনের উদ্দেশে সিলেট ছাড়েন আরিফুল হক চৌধুরী। সোমবার গিয়ে পৌঁছেন সেখানে। এরই মধ্যে তারেক রহমানের সাথে তার বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে ২টি ‘সিগনাল’ দিয়েছেন তিনি। যদিও কী সেই দুটি সিগনাল তা এখনো তার পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হচ্ছে না। বিষয়টি দেশে ফিরেই আরিফুল হক খোলাসা করবেনÑ জানিয়েছেন তার বলয়ের এক নেতা।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী হঠাৎ লন্ডনে যাওয়ায় সিলেটে তোলপাড় চলছে। তার এই সফরকে ঘিরে সিলেট ও লন্ডনে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কিন্তু তিনি বা তার নিকটজন কেউ এ নিয়ে মুখ খুলছেন না।

স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে তার এই সফরকে ‘লন্ডন মিশন’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এদিকে তিনি লন্ডন যাওয়ার আগে নগরে নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতায়ও অংশ নেন। কয়েকটি সভা করে সিলেট-১ আসনে ‘দল চাইলে’ প্রার্থী হওয়ার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেন।

যে আসনে প্রায় নিশ্চিত মনোনয়ন ধরে নিয়ে মাঠে রয়েছেন তারই রাজনীতিক মেট বিএনপির চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা খোন্দকার আবদুল মুক্তাদির। ফলে রাজনৈতিক মহল ধরেই নিয়েছেন, আরিফুল হক চৌধুরী তারেক রহমানের সাথে এই ইস্যুতেই কথা বলতে লন্ডনের বিমান ধরেন। তবে একই সাথে আলোচনায় আছে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টিও।

একটি সূত্র জানায়, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ঢাকায় দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সাথে বৈঠক করেন। সেখানে তাকে সিলেট সিটি করপোরেশনে প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলা হয়। সরকার চাইছে, সিসিকে রাজনৈতিক প্রশাসক নিয়োগ দিতে। কেননা আমলা প্রশাসক দিয়ে সিটির কাজে গতি আনা সম্ভব হচ্ছে না।

কাজের স্তূপ জমে আছে। বর্তমানে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারের দাপ্তরিক কাজ শেষে তিনি সিটিতে সময় দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

সপ্তাহে এক-দুদিন সময় দিলেও সেটি এত বড় সিটির সীমাহীন কর্মযজ্ঞের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে সিসিকে। এই জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে সরকার রাজনৈতিক প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।

সেক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ আরিফুল হক চৌধুরী। সরকারের তরফ থেকে আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে আলোচনা করার আগে দলের মতামত জানতে চাওয়া হলে দল তাকে ঢাকায় ঢেকে পাঠায়। সেখানেই নিশ্চিত হয় তার ‘প্রশাসক’ হওয়ার বিষয়টি। দলের হাই কমান্ডের সাথে আলোচনার পরে তিনি সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে কথা বলে আসেন। মূলত তারেক রহমানের পছন্দেই তিনি সিটির প্রশাসক পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। কেননা এর আগে তিনি একাধিক বার সিসিকের মেয়র ছিলেন এবং বেশ সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এম সাইফুর রহমান এবং এম ইলিয়াস আলীর পরে সিলেটে তাকে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দলের হাইকমান্ড তার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে চায়। বিশেষ করে সামনের চ্যালেঞ্জিং সংসদ নির্বাচনে তাকে গুরুত্ব সহকারে ভাবা হচ্ছে। সারা দেশে মর্যাদাপূর্ণ আসন হিসেবে পরিচিত সিলেট-১।

মিথ রয়েছে, যে এই আসনে জয়লাভ করে সে-ই সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার পর থেকে এটিই হয়ে আসছে। অতীতে বিএনপি এ আসনে মৌলভীবাজার থেকে এম সাইফুর রহমানকে নিয়ে আসে শুধু তার জনপ্রিয়তার জন্য। একই সাথে সাইফুর রহমান দুটি আসন থেকে প্রার্থিতা করে জয়লাভও করেন।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, এবারও তাই হতে পারে। সম্ভবত আরিফুল হক চৌধুরীর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তার বর্তমান বাসস্থান সিলেট-১ এবং জন্মস্থান মৌলভীবাজার-৪ এ বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এমন ম্যাসেজ দিয়ে সেই প্রস্তুতি নিতে তাকে লন্ডন থেকে দেশে পাঠানো হচ্ছে। তবে কোথায় নির্বাচন করবেন সেটি তিনি বা তার নিকটজনেরা এখনো স্পষ্ট জানাননি। এজন্যই তার সফর এবং ফিরতি ফ্লাইটের আগে চলে আসাকে ঘিরে সিলেটে রহস্য দানা বাঁধছে।

সূত্র জানায়, মৌলভীবাজার-৪ আসনে বিএনপির সে রকম কোনো প্রার্থী নেই। এ আসনে ৬ বারের এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুস শহিদ। এবার তার প্রার্থিতার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ আসন চা শ্রমিক অধ্যুষিত। আরিফুল হক চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি কমলগঞ্জে। সেখানের সন্তান হিসেবে তিনি বেশ জনপ্রিয়। অনেকে মনে করছেন, কোনো কারণে সিলেট-১ এ তাকে নমিনেশন দেওয়া না হলে মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে দেওয়া হবে।

আরিফুল হক চৌধুরীর এক নিকটজন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, সিলেটের সাবেক মেয়রকে সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রশাসকের দায়িত্ব নিলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি ‘প্রশাসক’ পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করবেন। এমনটিই বলা হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন এখন প্রায় স্থবির। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক প্রশাসকের বিকল্প দেখছে না সরকার। আর এই মুহূর্তে আরিফুল হক চৌধুরীর মতো নির্ভরযোগ্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে জন্য তার কথা ভাবা হচ্ছে।

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, আরিফুল হক চৌধুরীকে সংসদীয় আসনে দাঁড় করালে বিকল্প হিসেবে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের জন্য বিএনপি এরই মধ্যে পছন্দের প্রার্থী ভেবে রেখেছে। সিলেটে বিএনপি বলয়ে সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধি হিসেবে আরিফুল হক চৌধুরীর পরেই ভাবা হয় রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর কথা।

সেই লক্ষ্যে তাকে তৈরি করতে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতির পদে এনে বসানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের একাধিকবারের কাউন্সিলর। তার নির্বাচনি এলাকায় শুধু নয়, পুরো সিলেট মহানগরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার জনপ্রিয়তা বেশ তুঙ্গে।

একজন স্বচ্ছ ও সৎ জনপ্রতিনিধি হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। গ্রহণযোগ্যতাও আছে সর্বমহলে। সেই সুবাধে আরিফুল হক চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে প্যানেল মেয়র-১ হয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়রেরও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আরিফুল হক চৌধুরীর বিকল্প হিসেবে তাকেই বিএনপি সিলেট সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার তালিকায় প্রথম দিকে রেখেছে। আরিফুল হক চৌধুরীকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করিয়ে সংসদে নিয়ে গেলে তার জায়গায় আসতে পারেন রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। বিষয়টি এখন সবার মুখে মুখে।

Link copied!