বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


চৈতন্য চ্যাটার্জী, আক্কেলপুর (জয়পুরহাট)

প্রকাশিত: মে ১, ২০২৫, ০৪:৪৩ এএম

চিপস তৈরি করে স্বাবলম্বী যে গ্রাম

চৈতন্য চ্যাটার্জী, আক্কেলপুর (জয়পুরহাট)

প্রকাশিত: মে ১, ২০২৫, ০৪:৪৩ এএম

চিপস তৈরি করে স্বাবলম্বী যে গ্রাম

ছবিঃ রূপালী বাংলাদেশ

কেউ গোলাকার আলু পাতলা করে কাটছেন, আবার কেউ আলু সেদ্ধ করছেন, কেউ কেউ সেদ্ধ আলু রোদে শুকাতে দিচ্ছেন, কেউ আবার শুকানো আলু ভেজে চিপস তৈরি করছেন। এভাবেই আলু থেকে চিপস তৈরি করে সংসার চালান জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামের অনেক বাসিন্দা। আলুর চিপস তৈরি ও বিক্রি করেই স্বাবলম্বী ওই গ্রামের প্রায় ৪০০ পরিবার। গ্রামটি এখন আলুর চিপসের গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। গ্রামের লোকজন এখন আর বলতে পারেন না, ঠিক কবে থেকে তারা এই পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। তাবে অনেকেই বলছেন, বাপ-দাদার আমল থেকেই এ কাজ করেন তারা।

মূলত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত আলুর চিপস তৈরির কাজ করেন তারা। এ সময় গ্রামের শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কারও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। এটি তাদের সারা বছরের আয়-রোজগারের একমাত্র অবলম্বন। আলুর চিপস তৈরির মাধ্যমে এসব পরিবারের অভাব দূর হয়েছে। হাতে তৈরি করা আলুর চিপস বা আলুর পাপড়ের চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব চিপস রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

সরেজমিন শ্রীকৃষ্টপুরসহ পার্শ্ববর্তী ভদ্রকালি, কেশবপুর, চুকাইবাড়ী, চকরঘুনাথ গ্রামগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে বাড়িতে কেউ আলু সেদ্ধ করছেন, আবার কেউ সেদ্ধ আলু ঝুরি-ঝুরি করে গোল করে কাটছেন। এরপর কাটা আলুগুলো তুলসীগঙ্গা নদীর পাড়ে রোদে শুকাচ্ছেন। কয়েকজন জানান, তাদের গ্রামে ৪০০ পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে ১০-১২টি পরিবার বাদে সবাই আলুর চিপস তৈরি করে। মৌসুমি এই ব্যবসার আয়ে সারা বছর সংসার চলে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার মণ আলু সেদ্ধ করা হয়। যেসব ব্যবসায়ীর পুঁজি বেশি, তারা বেশি করে আলু কিনে চিপস তৈরি করে সংরক্ষণ করেন। সবাই কম-বেশি লাভবান হন। তারা আরও জানান, আলুর চিপস তৈরির জন্য এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আলু কিনতে হয়। সরকার যদি ছোট ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দিত, তাহলে তারা উপকৃত হতেন।

শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামের মো. বাবলু মন্ডল বলেন, ক্যাডিনাল জাতের আলু চিপসের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অন্য জাতের আলু দিয়ে চিপস তৈরি হলেও তেমন স্বাদ মেলে না। এ ছাড়া ক্রেতাদের চাহিদাও থাকে কম। বাজার থেকে প্রতি মণ ক্যাডিনাল আলু ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কেনা হয়। সেই আলুগুলো সেদ্ধ করার পর গোলাকার করে কেটে রোদে শুকিয়ে চিপস তৈরি করা হয়। পাঁচ মণ আলুতে এক মণ চিপস হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে আলুর চিপসের ব্যবসা প্রথমে নিয়ে আসেন আমার বাবা মিরাজ মন্ডল। বাবা চলে যাওয়ার পর আমি হাল ধরেছি। আমাদের দেখাদেখি চিপস তৈরির কার্যক্রম এ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাজনেরা এসে আলুর চিপস নিয়ে যান। আবার আমরা নিজেরাও ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিং, সিলেট, রংপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চিপসগুলো সরবরাহ করি। আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে এ ব্যবসায় পরিবারের সচ্ছলতা এসেছে। ছেলেমেয়ে স্কুলে লেখাপড়া করছে। আবার বাড়িঘরেরও উন্নতি হয়েছে।’

মোজাম্মেল সরদার বলেন, ১৩০ মণ আলু কিনে চিপস তৈরি করেছি। এক মণ শুকনো চিপস তৈরি করতে ২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। সময় লাগে দুই দিন। আর এক মণ চিপস বাজারে পাইকারি বিক্রি হয় ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায়। গত বছর ১০ হাজার টাকা পর্য়ন্তও বিক্রি হয়েছে।

ওই গ্রামের নূরজাহান বেগম বলেন, ‘চিপস ব্যবসায়ীরা আমাদের আলু কিনে দেয়। আগের দিন সেদ্ধ করে পরদিন পাতলা ও গোল করে কেটে রোদে শুকাতে দেই। শুকিয়ে গেলে তা প্যাকেটজাত করে পাইকারদের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। এতে তারা যে অর্থ দেয়, তাতে আমাদের সংসার ভালোই চলে। দিনে তিন থেকে চার মণ আলু সেদ্ধ করে শুকানো যায়। আলুর চিপস বানিয়ে আমি সংসার চালানোর পাশাপাশি নিজ জমিতে বাড়ি তৈরি করেছি। আমাদের সরকার যদি এই ব্যবসার জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয়, তাহলে আমরা বেশি করে আলু কিনতে পারব। ফলে আমরা বেশি বেশি চিপস তৈরি করতে পারব। তাতে শিল্পটা আরও এগিয়ে যাবে।’

Link copied!