বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জনাব আলী, রাজশাহী 

প্রকাশিত: মে ১, ২০২৫, ০৪:৫৯ এএম

ওয়াসার পানি দিয়ে থালাবাসন মাজতেও ভয়

জনাব আলী, রাজশাহী 

প্রকাশিত: মে ১, ২০২৫, ০৪:৫৯ এএম

ওয়াসার পানি দিয়ে থালাবাসন মাজতেও ভয়

ছবিঃ রূপালী বাংলাদেশ

দুর্নাম ঘোচাতে এবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় নেমেছে রাজশাহী ওয়াসা। বিভিন্ন সময়ে রাজশাহী ওয়াসার পানিতে ক্ষতিকর ‘কলিফর্ম’ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যার কারণে রাজশাহী নগরবাসীর কাছে ওয়াসার পানি মানেই নোংরা বলে বিবেচিত। ওয়াসার পানি পান করা দূরের কথা, থালাবাসন মাজতেও ভয় পান নগরবাসী। তার পরও দফায় দফায় ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। এক লাফে তিন গুণ দাম বেড়েছে পানির। এরপর থেকে ওয়াসার পানি নিয়ে চরম ক্ষোভ রয়েছে রাজশাহীবাসীর মধ্যে। এবার সেই দুর্নাম থেকে বের হতে সুপেয় পানি উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছে রাজশাহী ওয়াসা। রাজশাহী মহানগরবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে পদ্মা নদীর পানি শোধন করে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। দৈনিক ২০ কোটি লিটার পরিশোধিত পানি ২০২৭ সালের পরে নগরবাসীদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে রাজশাহী ওয়াসা।
 
২০১৫ সালে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হলেও তা শেষ হয় ২০২৩ সালের জুন মাসে। দীর্ঘ বিরতির পর অবশেষে চীনের এক কোম্পানির মাধ্যমে সেই প্রকল্প আলোর মুখে দেখতে যাচ্ছে। এতদিন রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থায় ঝিমিয়ে পড়েছিল এই প্রকল্প। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টায় এই প্রকল্প আলোর মুখে দেখবে বলে আশাবাদী নগরবাসী।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে গোড়াগাড়ী থেকে পদ্মার পানি পরিশোধন করে রাজশাহী শহরে আনা হবে পাইপলাইনে। চীন এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ২০ শতাংশ। প্রকল্পটি শেষ হলেই পাওয়া যাবে সুপেয় পানি। গত সোমবার পরিশোধিত প্রকল্প এলাকায় এর নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের সহায়তায় এরই মধ্যে পানি শোধনের ওই প্রকল্পের কাজ ২০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, চুক্তি অনুযায়ী ৪৮ মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করতে হবে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৭৪৮ কোটি ও হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে।

নির্মাণকাজের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহের পাশাপাশি আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতিতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ-চীন একসঙ্গে কাজ করছে। ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও উন্নয়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন চীনা রাষ্ট্রদূত।

তিনি আরও বলেন, ‘গত মাসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফর করেছেন। আগামী মাসে চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে আসবেন। এ ছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ব্যাবসায়িক সম্মেলনে চীনের ৫০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এভাবে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।’

ওই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে লবণাক্ততা, বন্যাসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের অনেক এলাকায় সুপেয় পানির অভাব। আগামী ৫০-১০০ বছরের মধ্যে পানির সংকট সমাধানে কাজ করছে সরকার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আশা পোষণ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে রাজশাহীর বাসিন্দারা সুপেয় পানি পান করতে পারবেন। এ ধরনের প্রকল্প দেশের অন্যান্য স্থানেও বাস্তবায়ন করা হবে। সে জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদার, বিশেষ করে চীন সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানান সরকারের এই যুগ্ম সচিব।

রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল আলম সরকার বলেন, রাজশাহী ওয়াসা বরেন্দ্র অঞ্চলের আওতাধীন এলাকা। এখানকার পানির স্তর খুব নিচে চলে গেছে। ভূগর্ভস্থ পানির উত্তোলনের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ায় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। তাই সারফেস ওয়াটার প্রকল্প রাজশাহীর পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে।

প্রকল্প পরিচালক ও রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. পারভেজ মাহমুদ বলেন, ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার এই প্রকল্পের মাধ্যমে কাটাখালী, নওহাটা ও গোদাগাড়ির ৩০টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা নিরাপদ সুপেয় পানির সুবিধা পাবেন। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে।

তবে নগরবাসী জানান, ২০২১ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাজশাহী শহরের ১০৪টি পয়েন্টের পানি পরীক্ষা করে। পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) সরবরাহ করা এসব পানিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ‘কলিফর্ম’ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবু পানির মানোন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এখনো সরবরাহ করা হচ্ছে এই পানি। তাই ওয়াসার পানির প্রতি নগরবাসীর নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। তারা বলেন, এই প্রকল্পের পানি যাতে আবারও কোনো সন্দেহের কারণ না হয়, তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখার অনুরোধ করেন। এ ছাড়া ওয়াসার পানির দাম তিন বছর আগে বাড়ানো হয়েছিল তিন গুণ। এবার পানির ৩০ শতাংশ দাম বাড়াতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ওয়াসা। আবার যেন পানির দাম না বাড়ে, সেই দাবি নগরবাসীর।

ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, রাজশাহী নগরে দৈনিক পানির চাহিদা প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ লিটার। তবে ওয়াসা সরবরাহ করতে পারে ১০ দশমিক ৭ কোটি লিটার। ফলে প্রতিদিন ২ দশমিক ৮ কোটি লিটার পানির ঘাটতি দেখা দেয়। বর্তমানে রাজশাহী ওয়াসা ১২৩টি গভীর নলকূপ ব্যবহার করে এবং ৮৫৯ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে ৪৮ হাজার ৫২৭টি পরিবার এবং ৭২১টি বাণিজ্যিক গ্রাহককে পানি সরবরাহ করে থাকে। এক ইউনিট বা ১ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করতে ওয়াসা ৯ টাকা ৩০ পয়সা ব্যয় করে। গ্রামীণ জনগণের টাকায় শহরের মানুষকে স্বল্প খরচে পানি সরবরাহ করা অনৈতিক। ফলে পানির দাম বাড়াতে হচ্ছে।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক জামাত খান বলেন, ওয়াসার পানি এখনো পানযোগ্য নয়। গৃহস্থালির কাজেও ব্যবহার করা যায় না। দাম বাড়ানোর চেয়ে পানির মান বাড়ানোর দিকে আগে মনোযোগ দেওয়া উচিত ওয়াসার। তা না হলে আবারও প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

Link copied!