সীমান্তে চোরাচালানের জন্য ভারত সব সময় একতরফাভাবে দায়ী করে বাংলাদেশকে। কিন্তু সত্য হলো এর দায় শুধু বাংলাদেশেরই নয়, ভারতেরও। সিলেট সীমান্তে চোরাচালানে জড়িত আছে দুদেশের চোরাকারবারিরা। উভয় দেশের চোরাচালানে জড়িত লোকেরা এখন সীমান্তে সক্রিয়। এত দিন চিনি, খাদ্যপণ্য, কসমেটিক, গরু, মদ, চোরাচালান হলেও এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে রসুন ও মাছ। এই দুটি পণ্য এখন বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে যাচ্ছে চোরাকারবারিরা। এর জন্য রুট হিসেবে ব্যবহার করছে সিলেটকে। এখন ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে মদ ও গরু। আর ভারতের চোরাকারবারিরা নিয়ে যাচ্ছে মাছ ও রসুন। বিজিবি-পুলিশ ও চোরাকারবারির সমন্বিত চোরাকারবারি চক্রই এই কাজটি করছে অবলীলায়।
সিলেট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান জানান, চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা সর্বতোভাবে অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সীমান্তবর্তী এলাকার নানা সময় অভিযান পরিচালনা করে চোরাচালানি মালামাল জব্দ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, একসময় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর জাফলং জিরো পয়েন্টের পাশ দিয়ে মদ, ফেনসিডিল ও আরও কিছু পণ্য এসে বাংলাদেশে ঢুকত। এ সময় হাতবদল হয়ে ভারতে যেত সোনা ও রুপি। অন্যান্য চোরাই পথ ব্যবহার করে গরু, চিনি, কসমেটিক, মদ ও চকোলেট-বিস্কুট দেশে এনে ঢোকানো হতো। যেত ইলিশ মাছ এবং আরও কিছু পণ্য। এসবের সাথে জড়িত ছিল ভারতের চোরাকারবারিরাও। বিগত কয়েক বছর সেখানে সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে আসে গরু ও চিনি। সরকার দলের নেতাকর্মীরা সরাসরি প্রকাশ্যে নামেন এসব ব্যবসায়। কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে আনা হতো গরু, কসমেটিক। আর চিনি, মাদকের জন্য ব্যবহার হয় জাফলং এলাকা ও এর আশপাশের সীমান্ত। বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্ত এলাকার প্রতাপপুর, পান্থুমাই, সংগ্রাম, সোনারহাট, বিছনাকান্দি, লাফার্জ, নোয়াকোট এবং কালাইরাগ এলাকা দিয়ে চোরাই পণ্য আসছে ও যাচ্ছে।
সূত্র মতে, ভারতের পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়ে রসুন উৎপাদন হয় না বললেই চলে। আর সমতল অঞ্চল না থাকায় সেখানে মাছ দেশটির অন্য সমতল অঞ্চল থেকে নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু পাশের আসাম রাজ্যের কাছাকাছি এলাকায়ও মাছের খুব সরবরাহ নেই। ফলে এর জন্য পশ্চিমবঙ্গ বা তার পাশের এলাকা থেকে আনতে হয়। এতে খরচ বেশি হওয়ায় মেঘালয় রাজ্যের চোরাকারবারিরা বাংলাদেশের দিকে ঝোঁকে। সেখানকার মাছের জোগান দিতে এ অঞ্চল এখন বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। আর এর পুরোটাই যায় চোরাই পথে। একসময় ইলিশ চোরাই হলেও এখন রুই, কাতলা, পাঙ্গাশসহ অন্যান্য জাতের মাছ সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে ভারতে নিয়ে যাচ্ছে চোরাকারবারিরা। এর সাথে যাচ্ছে রসুনও।
নিয়মিত সিলেট সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান হলেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি মাঝেমধ্যে আটক করে অপরাধীদের। অনেকের অভিযোগ, মূলত আইওয়াশ করতেই বিজিবি ও পুলিশ মিলে মাঝেমধ্যে আটক করার নাটক করে।
দেনদরবারে মিটমাট না হলেই চালান আটক করা হয়। বাকি সময় প্রতিদিন সিলেট সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান যা হচ্ছে, আটক হচ্ছে তার থেকে নামমাত্র পণ্য। গতকাল শনিবারও সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত থেকে এ রকমই কয়েকটি চালান আটক করা হয়। এসব চোরাচালান পণ্য জব্দ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ওই দিন ভোরে বিজিবির ৪৮ ব্যাটালিয়নের টহল দলের অভিযানে এসব মালামাল জব্দ করা হয়।
বিজিবি জানায়, অভিযানকালে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় চিনি, কমলা, চকোলেট, মহিষের মাংস, বিয়ার, মদ, বাংলাদেশ থেকে পাচারকালে রসুন ও শিং মাছ জব্দ করতে সক্ষম হয়। জব্দকৃত পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ৩৮০ টাকা বলে জানিয়েছে বিজিবি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন